রাষ্ট্রকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট সুইস ব্যাংকের কাছে অর্থ জমা বিষয়ে বাংলাদেশ কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য চায়নি, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ডের এমন বক্তব্য । সুইস রাষ্ট্রদূতের দেওয়া বক্তব্য সঠিক নয় দাবি করে সুইস ব্যাংকের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে এবং চেয়েও তা পাওয়া যায়নি বলে জানানোর পর হাইকোর্ট এ মন্তব্য করেন। গতকাল রবিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করে বলেছেন, সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য রাষ্ট্রকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। তাই আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে থাকা তথ্য হলফনামা আকারে আদালতে উপস্থাপনের জন্য
পরবর্তী দিন রাখলাম। দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে তাদের বক্তব্য এফিডেভিট আকারে দাখিলের নির্দেশ দিয়ে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২১ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
advertisement
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। আর রাষ্ট্র পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। এর আগে দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান হাইকোর্টকে বলেন, ‘বিদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে দুদক মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা ২০১৯-এর বিধানাবলির আলোকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে নির্দিষ্ট ছক মোতাবেক অধিযাচনপত্র প্রেরণ করে। সে অধিযাচনপত্রের আলোকে বিএফআইইউ সংশ্লিষ্ট দেশের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করে।’
দুদক আইনজীবী হাইকোর্টকে আরও জানান, ‘দুদক ২০১৪ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত তিনটি অনুসন্ধান/তদন্ত সংক্রান্তে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির তথ্য সুইজারল্যান্ড থেকে সংগ্রহের জন্য বিএফআইইউকে অনুরোধ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএফআইইউ দুদককে জানায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট একজন ব্যক্তির বিষয়ে সুইজারল্যান্ডের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছে যে, ওই ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। এ ছাড়া অন্য দুটি পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বিএফআইইউ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান দুদক আইনজীবী। এ আইনজীবী হাইকোর্টকে আরও বলেন, ‘বিএফআইইউ বিদেশি ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে যে তথ্য প্রেরণ করে, তা এগমন্ড চার্টারের শর্তানুযায়ী গোপনীয় এবং কেবল ইন্টেলিজেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ওই তথ্য আলামত হিসেবে কোনো বিচারিক কার্যক্রমে ব্যবহার করা যায় না।’
এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক হাইকোর্টকে বলেন, ‘উনি (সুইস রাষ্ট্রদূত) যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। ওনার বক্তব্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। সুইস ব্যাংক চলতি বছরের ১৬ জুন বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরদিন এগমন্ড সিকিউর ওয়েবের (ইএসডব্লিউ) মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যাংক ও ব্যক্তির জমানো অর্থের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের জন্য সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে (ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট) অনুরোধ করা হয়। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পায়নি বাংলাদেশ।’
এ ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে আরও বলেন, ‘২০১৩ সালের জুলাইতে ইএসডব্লিউর সদস্য হওয়ার পর চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ৬৭ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য চায় বাংলাদেশ। ইএসডব্লিউর মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের এফআইইউকে এ তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু একজন ছাড়া অন্যদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানায় সুইজারল্যান্ড। আর ওই একজনের তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দিয়েছে বিএফআইইউ।’
‘সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা সম্পর্কে সরকার নির্দিষ্ট তথ্য চায়নি’ সংক্রান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পড়েছেন জানিয়ে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দেন। আদালত তার আদেশে বাংলাদেশ সরকার সুইস ব্যাংকের কাছে কোনো তথ্য না চাওয়ার বক্তব্যের বিষয়ে রবিবারের মধ্যে দুদক এবং রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে বলেন। সে অনুযায়ী দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ গতকাল আদালতে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
এর আগে গত বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ আয়োজিত ডিকাব টকে সুইস রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড বলেন, ‘সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বা এসএনবির ২০২২ সালের জুন মাসে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরে বাংলাদেশিরা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে জমা করেছেন।’ রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড বলেন, ‘তথ্য পেতে হলে কী করতে হবে, সে সম্পর্কে আমরা সরকারকে জানিয়েছি, কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো তথ্যের জন্য আমাদের কাছে অনুরোধ করা হয়নি। আমরা আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দুপক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে এ ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব এবং সেটি তৈরি করতে হবে। এটি নিয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছি।’ এর মধ্যে গত শুক্রবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, সেটা তারা মিথ্যা বলেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ফিন্যান্স সেক্রেটারি আমাকে আগে জানিয়েছিলেন, তারা তথ্য চেয়েছিলেন, তারা (সুইস ব্যাংক) উত্তর দেয়নি।