ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ রাগ অধিকাংশ ক্ষেত্রে মনে জমে থাকা । এর প্রকাশ ঘটায় মানুষ নানাভাবে। আর রাজনীতির ইতিহাসে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে জুতা মারার ঘটনা নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতারাই তিক্ত এই অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার পশ্চিবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্দেশে জুতা ছুড়ে মেরেছেন এক নারী। তবে এ তালিকায় পার্থ শুধু একা নন, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের মতো নেতারাও রয়েছেন। বাদ যাননি জর্জ বুশ, হিলারি ক্লিনটন ও ওয়েব জিয়াবাও-এর মতো নেতারাও।
এবার ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা অবলম্বনে জেনে নিন তালিকায় ছিলেন কোন নেতারা-
পার্থ চট্টোপাধ্যায়
জোকা ইএসআই হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার শারীরিক পরীক্ষার জন্য দিয়ে যাওয়া হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। পরীক্ষা শেষে হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার সময় আচমকাই তাকে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারেন এক নারী। যদিও সেই জুতা পার্থর গায়ে লাগেনি। তার আগেই পার্থকে তার গাড়িতে ঢুকিয়ে নেন ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
রাহুল গান্ধী
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উত্তর প্রদেশে রোড শো করছিলেন রাহুল গান্ধী। তাকে লক্ষ্য করে জুতা ছোড়েন হরিওম মিশ্র নামে এক ব্যক্তি। তার আগের সপ্তাহে জম্মুর উরিতে জঙ্গি হামলায় শহীদ হয়েছিলেন ১৮ জওয়ান। হরি ওম মিশ্রের ক্ষোভ ছিল, শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের বদলে প্রচার করছেন রাহুল। ২০১২ সালেও উত্তরাখণ্ডে এ রকম জুতা হামলার হাত থেকে অল্পের জন্য বেঁচেছিলেন এই কংগ্রেস নেতা।
মনমোহন সিং
২০০৯ সালের এপ্রিলে আমদাবাদে একটি প্রচারসভায় বক্তব্য রাখছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তাকে লক্ষ্য করে জুতা ছোড়েন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক ছাত্র। মঞ্চের সামনে এসে পড়ে সেই জুতা। আটক করা হয় অভিযুক্তকে। পরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমা করে দেওয়ায় ছাড়া পেয়ে যান ওই ছাত্র।
ওমর আবদুল্লা
২০১০ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তাকে লক্ষ্য করে জুতা ছোড়েন এক পুলিশ কনস্টেবল। এতে প্রশ্নের মুখে পড়ে নিরাপত্তা।
নবীন পট্টনায়েক
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বরগাড় জেলার একটি গ্রামে উপনির্বাচনের প্রচার করছিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। ওই সময় তাকে লক্ষ্য করে জুতা ছোড়েন কার্তিক মেহের। নামের এক ব্যক্তি। শুধু দেশের রাজনীতিবিদরাই নন, বিদেশে গণ্যমান্যদের অনেকেও এমনভাবে হেনস্থা করা হয়েছে।
হিলারি ক্লিনটন
২০১৪ সালের ১০ এপ্রিল লাস ভেগাসে বক্তব্য রাখছিলেন প্রাক্তন ইউএস সেক্রেটারি হিলারি ক্লিনটন। তার দিকে উড়ে আসে একটি জুতা। এতটাই আচমকা যে, বক্তৃতা থামিয়ে বিল ক্লিনটনপত্নী জিজ্ঞেস করেন, ‘কী ছিল এটা? বাদুড়!’ জুতা ছুড়ে মারার অবশ্য কোনো কারণ বলেননি অভিযুক্ত অ্যালিসন আর্নস্ট নামের ওই ব্যক্তি।
জর্জ বুশ
২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাগদাদ গিয়েছিলেন জর্জ বুশ। তার ৩৭ দিন পরেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে তার মেয়াদ শেষ হবে। বুশকে লক্ষ্য করে নিজের দুটি জুতা ছোড়েন এক ইরাকি সাংবাদিক। বিদায় সম্ভাষণ করে তিনি বলেন, ‘কুকুর’। বুশ অবশ্য প্রশাসকের মতোই দক্ষ হাতে সামলেছিলেন সেই অতর্কিত আক্রমণ। বলেছিলেন, ‘একটাই তথ্য দিতে পারবো, জুতোর সাইজ হলো ১০’। ইরাকের যুদ্ধের জন্য সে দেশের বাসিন্দারা বারবার দায়ী করেছিল বুশকে।
ওয়েন জিয়াবাও
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখছিলেন চীনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওয়েন জিয়াবাও। তাকে লক্ষ্য করে জুতা ছোড়েন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র মার্টিন জাহ্নকে। যদিও জিয়াবাও যে মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলেন, তার ধারে কাছেও আসেনি মার্টিনের জুতা।
জন হাওয়ার্ড
২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার একটি টকশোতে বক্তব্য রাখছিলেন জন হাওয়ার্ড। তাকে লক্ষ্য করে জুতা ছোড়েন জনৈক পিটার গ্রে নামের একজন। ইরাকের যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিলেন তিনি। ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসনকে সমর্থনের জন্য হাওয়ার্ডের দিকে জুতা ছোড়েন পিটার।
পারভেজ মোশাররফ
চার বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকার পর ২০১৩ সালে পাকিস্তানে ফিরেছিলেন সে দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ। রাজনৈতিক অধিকার বুঝে নেওয়ার জন্য ২৯ মার্চ করাচির আদালতে যাচ্ছিলেন তিনি। সে সময় তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন ২০ জন আইনজীবী। তাদের মধ্যেই একজন আইনজীবী মোশাররফকে লক্ষ্য করে জুতা ছোড়েন।
মা ইং-জিও
২০১৩ সালের ১৯ অক্টোবর একটি ক্রীড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন তাইওয়ানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মা ইং-জিও। তাকে লক্ষ্য করে জুতা ছোড়েন এক বিক্ষোভকারী। নিজের শাসনকালে বারবার জুতা হামলার শিকার হয়েছিলেন জিও। তার নিরাপত্তার জন্য ১৪৯টি জুতা ধরার জাল কিনেছিল পুলিশ। খরচ পড়েছিল ১৬ হাজার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১২ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।