আদালত টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন। রায়ে তিনটি আইনের চারটি ধারায় প্রদীপকে ২০ বছরের কারাদণ্ড, চার কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো দুই বছরের কারাদণ্ড এবং চুমকি কারনকে ২১ বছরের কারাদণ্ড, চার কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো দুই বছর ৯ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। গতকাল বুধবার দুপুর ১১টা-১৫ মিনিটে চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় প্রদীপ ও চুমকি দুজনই কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। এর আগে কঠোর নিরাপত্তা দিয়ে নগর পুলিশের পৃথক দুটি প্রিজন ভ্যানে করে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে তাদের আদালতে নিয়ে আসা হয়।
এর আগে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল।
এদিকে দুদকের দায়ের করা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, সরকারি কর্মকর্তা হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীর নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন প্রদীপ। তারা একে অপরকে সহযোগিতা করেছেন। এটি জঘন্য অপরাধ। এদিকে রায় ঘোষণা পরবর্তী দুদকের পিপি মাহমুদুল হক আজাদীকে বলেন, আমরা রায়ে সন্তুষ্ট। সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করেছিলাম। আদালত তা আমলে নিয়েছেন এবং আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছেন। তিনি বলেন, আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত প্রদীপকে ২০ বছর ও তার স্ত্রী চুমকিকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। পুরো বিচার প্রক্রিয়ায় ২৯ জন সাক্ষীর মধ্য থেকে মোট ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। সে যেই হোক অপরাধ করলে পার পাওয়ার সুযোগ নেই তা এ রায়ের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে বলেও জানান দুদক পিপি মাহমুদুল হক।
এদিকে রায়ে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়ে প্রদীপ-চুমকির আইনজীবী সমীর দাশ গুপ্ত আজাদীকে বলেন, ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা এ রায়ে সংক্ষুব্ধ। উচ্চ আদালতে যাব। তিনি বলেন, এ মামলার সাক্ষী সংখ্যা ২৯ জন। এর মধ্যে ২৪ জনকে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে হাজির করেছে। এর মধ্যে ২২ জনই বলেছে তারা ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানে না। এছাড়া যার অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক মামলাটি করেছেন তাকে হাজির করা হয়নি। সে মামলার তিন নম্বর সাক্ষী। গুরুত্বপূর্ণ এ সাক্ষীকে হাজির না করে এবং মাত্র ২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য বিবেচনায় নিয়ে আদালত এ রায় ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, অভিযোগকারী সেলিম এলাহী ছিলেন মহেশখালীর। তার বিরুদ্ধে মাদকসহ ১৫ টির মতো মামলা রয়েছে। এমন একজন মানুষের অভিযোগের (ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন) ভিত্তিতে আমার মক্কেলদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। আদালতে যা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে সক্ষম হননি।
যেসব ধারায় প্রদীপ-চুমকি কারাদণ্ড পেয়েছেন : বৈধ সম্পদ অর্জন মামলায় তিনটি আইনের চারটি ধারায় প্রদীপ-চুমকিকে সাজা দিয়েছেন আদালত। সেগুলো হলো- দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় চুমকিকে ১ বছরের কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এই ধারায় খালাস পেয়েছেন প্রদীপ কুমার দাশ। একই আইনের ২৭ (১) ধারায় প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি দুজনকেই ৮ বছর করে কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় দুজনকেই ১০ বছর করে কারাদণ্ড, চার কোটি টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ২ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় প্রদীপ ও চুমকিকে দুই বছর করে কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো দুই মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তিনটি আইনের চারটি ধারায় প্রদীপ কুমার দাশকে মোট ২০ বছরের কারাদণ্ড, ৪ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ও ২ বছর ৮ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আর তার স্ত্রী চুমকিকে মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড, ৪ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ২ বছর ৯ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। সবগুলো কারাদণ্ড একসাথে চলবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন।
গত ১৮ জুলাই অবৈধ সম্পদ অর্জনের এ মামলায় প্রদীপ চুমকির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক কার্যক্রম শেষ হয়। সেদিন আদালত রায় ঘোষণার জন্য গতকাল বুধবার দিনটি নির্ধারণ করেন। আদালত সূত্র জানায়, এ মামলায় গত ২০ জুন রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক এবং গত ১২ জুন সাফাই সাক্ষ্য শেষ হয়। এর আগে গত ৬ জুন প্রদীপ-চুমকিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা করা হয়। এ সময় তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তারও আগে গত ২৯ মে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আসামি পক্ষের আইনজীবীর জেরা করার মাধ্যমে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়। মামলায় মোট সাক্ষ্য দিয়েছেন ২৪ জন।
দুদকের এ মামলায় শুরু থেকে পলাতক থেকে গত ২৩ মে আত্মসমর্পণ করে জামিন প্রার্থনা করেন প্রদীপের স্ত্রী চুমকি। আদালত এ আবেদন নাকচ করে দিয়ে ওইদিন তাকে কারাগারে পাঠায়। অন্যদিকে মামলার প্রধান আসামি প্রদীপ কুমার দাশ ঘটনার পর থেকে কারাগারে আছেন। টেকনাফের মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেলে পরে এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদক, চট্টগ্রাম কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে প্রদীপ চুমকির বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। মামলাটির তদন্তও করেন দুদক কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত বছরের ২৮ জুলাই প্রদীপ-চুমকির বিরুদ্ধে আদালতে তিনি চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে বলা হয়, সম্পদ বিবরণীতে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয় বর্হিভূত অর্জন এবং হস্তান্তরের অপরাধ করেছেন প্রদীপ-চুমকি। নগরীর পাথরঘাটায় একটি ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে সেমিপাকা ঘর, ৪৫ ভরি সোনার গয়না, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস এবং অভিযোগপত্রে এসবও উল্লেখ করা হয় কক্সবাজারে ফ্ল্যাট রয়েছে প্রদীপের, ।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |