চীন-মার্কিন ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর নিয়ে । বেইজিং কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানিয়েছে, পেলোসি যদি অগ্রসর হন তা হলে এর ‘মারাত্মক পরিণতি’ হবে। গতকাল এ খবর জানিয়েছে বিবিসি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের পর দেশটির তৃতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হলেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পেলোসি। বেইজিংয়ের হুমকি উপেক্ষা করে পেলোসি যদি তাইওয়ান সফর করেন, তা হলে তিনিই হবেন ১৯৯৭ সালের পর দ্বীপটিতে সফরকারী সবচেয়ে উচ্চপদস্থ মার্কিন ব্যক্তি। পেলোসির এই সফর ঘিরে সম্প্রতি বড় ধরনের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

এদিকে কয়েকদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাংবাদিকদের বলেছেন- এই মুহূর্তে স্পিকারের তাইওয়ান সফর করা ঠিক হবে না বলে মনে করছে সামরিক বাহিনী। পাশাপাশি হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ ধরনের সফর নিয়ে চীন যে ধরনের তপ্ত কথা বলছে তা স্পষ্টতই অসহযোগিতামূলক ও অপ্রয়োজনীয়। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরে জানিয়েছে, পেলোসি নিজেও এ ধরনের কোনো সফরের ঘোষণা দেননি আর তাইওয়ান নিয়ে মার্কিন অবস্থানও পরিবর্তন হয়নি। তা হলে প্রশ্ন উঠছে- এই সফর নিয়ে এত উত্তেজনা কেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন জনগণ এবং কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই দলের মধ্যেই তাইওয়ানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন রয়েছে। এ ছাড়া পেলোসি তার ৩৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সব সময় চীনের সমালোচক হিসেবে দেখা গেছে। চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইস্যুতে সব সময়ই সরব আছেন তিনি। চীনে গণতন্ত্রপন্থি ও ভিন্নমতাবলম্বীদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি। খবরে আরও বলা হয়, পেলোসির প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল- এপ্রিলেই তাইওয়ান সফর করার; কিন্তু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তাইওয়ান সফর নিয়ে কিছুই খোলাসা করেননি তিনি। কয়েকদিন আগে শুধু বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- তাইওয়ানের প্রতি সমর্থন দেওয়া।

প্রসঙ্গত, চীন তাইওয়ানকে নিজেদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া প্রদেশ মনে করে। এমনকি প্রয়োজনে একীভূত করতে পারবে- এমন মনোভাব ব্যক্ত করে। এমনকি বল প্রয়োগের সম্ভাবনার প্রায়শ বলে থাকে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে চীনের অংশ মনে করে ‘এক চীননীতি’ সমর্থন করে থাকে; কিন্তু তাইওয়ানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জোড়াল সম্পর্ক রয়েছে। তাইওয়ানকে অস্ত্র দিয়ে পাশে থাকে ওয়াশিংটন। এই সম্পর্ক নিয়েও বেইজিংয়ের মাথাব্যথা রয়েছে। চীন বরাবর বলে আসছে- তাইওয়ান যদি স্বাধীনতা ঘোষণা করে, তা হলে তারা যুদ্ধ ঘোষণা করবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেইজিংয়ের যুদ্ধবিমান নজিরবিহীনভাবে তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় উদ্বেগ দেখিয়েছে। আর বেইজিং বলছে- এটি তাদের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’। এ ধরনের টানাপড়েনের মধ্যেই গত এপ্রিলে ৬ মার্কিন আইনপ্রণেতা আকস্মিক তাইওয়ান সফর করেন। চীন বরাবার এমন সফর নিয়ে সতর্ক করে থাকে। এ কারণে গত সোমবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান সতর্ক করে বলেছেন- পেলোসি যদি তার সফর নিয়ে অগ্রসর হন, তা হলে তার চীন দৃঢ় ও কড়া পদক্ষেপ নেবে। তিনি আরও বলেন, মারাত্মক সব পরিণতির দায় যুক্তরাষ্ট্রকে নিতে হবে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031