সশরীরে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে গিয়ে এবার পাস নিতে হচ্ছে। মোটরসাইকেল নিয়ে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে পুলিশের দেওয়া মুভমেন্ট পাসে সাড়া মিলছে না।  অনলাইনে মুভমেন্ট পাস নেওয়ার পদ্ধতি না থাকায় সশরীরে পাস নিতে অনীহা বাইকারদের। সব মিলিয়ে মুভমেন্ট পাস নিয়ে ক্ষুব্ধ তারা। বাইকারদের অভিযোগ, যাত্রীদের পকেট কাটতে এবং বাস মালিকদের সুবিধা দিতেই মোটরসাইকেলের ওপর অন্যায্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণহীন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, কিছু মোটরসাইকেলচালক ডিসি অফিস থেকে মুভমেন্ট পাস নিচ্ছে। তবে খুব অল্প সময় হাতে রেখে মুভমেন্ট পাসের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। অনেক বাইকার বিষয়টি জানে না। চেকপোস্টে মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরার যথাযথ কারণ দেখাতে পারলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

সড়ক দুর্ঘটনারোধে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এক সপ্তাহ মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ হয়েছে। এ সময় মোটরসাইকেলে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াতও বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনে কারও মোটরসাইকেলে চলাচলের প্রয়োজন হলে পুলিশের অনুমতি নিতে বলেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল সকাল থেকে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনারদের কার্যালয়ে আবেদন করে এ অনুমতি নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে গতকাল রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ট্রাফিকের ডিসি অফিসগুলোতে খবর নিয়ে দেখা গেছে, মুভমেন্ট পাস নেওয়ার ব্যাপারে তেমন সাড়া মিলছে না।

ঢাকার চারটি বড় প্রবেশমুখের একটি আবদুল্লাহপুর। এটি ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের অধীনে। এ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাইফুল হক গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় আমাদের সময়কে বলেন, লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে তারা ১৫টি মুভমেন্ট পাস দিয়েছেন। মুভমেন্ট পাস ছাড়া চেকপোস্টে মোটরসাইকেল নিয়ে আসলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যদি কেউ যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারছেন তা হলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া ঢাকার প্রবেশমুখ পুরান ঢাকার বাবুবাজার সেতু পড়েছে ট্রাফিক পুলিশের লালবাগ বিভাগে। এ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, মুভমেন্ট পাসে তেমন সাড়া নেই। বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। মোটরসাইকেল আসা-যাওয়ার বিষয়টি তিনি তদারকি করছেন। পুলিশ তাদের সহায়তা করছে। এছাড়া ঢাকার আরও ছয়টি ট্রাফিক বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুভমেন্ট পাসের ব্যাপারে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। মূলত সশরীরে পুলিশের অফিসে গিয়ে চালকদের অনুমতি নিতে অনীহা।

তবে খুব সহজেই মুভমেন্ট পাস পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আলী আজম নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তিনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার বাড়িতে মোটরসাইকেল নিয়ে যাবেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি ডিএমপির ট্রাফিক উত্তরা বিভাগ থেকে মুভমেন্ট পাস নিয়েছেন। খুব সহজেই তিনি সেটা পেয়েছেন।

এদিকে, মহাসড়কে বাইক নিষিদ্ধ করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন লাখো নিয়মিত বাইকার। এর জন্য মোটরসাইকেল চালকরা দোষারোপ করছেন বাস মালিকদের। তবে বাস মালিকরা বলছেন, সরকার তাদের সঙ্গে কথা বলেনি। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুট করে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাইকারদের বিপাকে ফেলেছে। এতে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। সরকার আগে থেকে সবাইকে এ বিষয়ে জানাতে পারত।

যাত্রীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গণপরিবহনের সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিষিদ্ধ না করে এই বাহনটির স্পিড লিমিট করে দেওয়া, লাগেজ-ব্যাগেজ নিয়ে না যাওয়াসহ অন্যান্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে চলাচলের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

বাইক চালিয়ে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যাতায়াতকারী ফারুক হোসেন বলেন, ঈদের সময় বাসগুলো দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ ভাড়া নেয়। ৩০০ টাকার টিকিট হয়ে যায় হাজার টাকা। মানুষ মোটরসাইকেলে বাড়ি যাওয়া শুরু করায় তাদের এই ব্যবসাটা আর হচ্ছে না। ফলে বোঝা-ই যায় সরকারের এই সিদ্ধান্তে বাস মালিকদের হাত আছে।

আরেক বাইকার জামিল হোসেন বলেন, মোটরসাইকেল কেনার সময় সরকারকে ট্যাক্স দেওয়া হয়। সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের জন্যও আলাদা ট্যাক্স আছে। তা হলে তাদের কথা না ভেবে হঠাৎ বাইক বন্ধ করে দেওয়া হলো কার স্বার্থে।

তবে বাস মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, বাইক বন্ধে তাদের কোনো হাত নেই। সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেও বাইক বন্ধ করে নাই।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031