প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে মীরসরাইয়ের বারইয়ারহাট লেভেল ক্রসিংয়ে । এতে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই। এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশই গেটম্যানে অবহেলায় ঘটছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তারা বলেন, একেকটা দুর্ঘটনা ঘটে। এরপর গেটম্যান হয়তো পালিয়ে যায়, না হয় তার পরিবর্তে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে নতুন যেই আসছে তার অবহেলায়ও আবার ঘটছে দুর্ঘটনা। কাজের সময় কখনো তারা ঘুমিয়ে থাকে। কখনো বা আশেপাশের চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেয়।
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রামের অনেক বাস, ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাসসহ স্থানীয় সিএনজি অটোরিকশাগুলোকে বারইয়ারহাটের এই লেভেল ক্রসিং পার হতে হয়। এ সময় গেটম্যানের দায়িত্বে অবহেলায় অনেক সময় গাড়িগুলো রেললাইনে উঠে আটকে যায়। কিংবা ট্রেন চলাচলের সময় ব্যারিয়ার না দিয়ে গেটম্যান হয়তো ঘুমিয়ে থাকে, না হয় কোথাও গিয়ে আড্ডা দেয়। ফলে ঘটে যায় দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, শুধুমাত্র গেটম্যানের অবহেলায় এই লেভেল ক্রসিংয়ে গত ৫ বছরে অন্তত ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে অন্তত ২০ জন পথচারী। সর্বশেষ গত ২২ জুন রাতে ট্রেনের ধাক্কায় বালুবাহী ট্রাক চালকের হেলপার মুরসালিন (১৯) নিহত ও চালক শাহ আলম (৪০) আহত হন। এ সময় গেটম্যান আনোয়ার হোসেন (৪০) দায়িত্ব পালন না করে ঘুমিয়েছিলেন। পরে তাকে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে রেলওয়ে পুলিশ। গত বছরের ডিসেম্বরে এস আলম পরিবহনের একটি বাস ও চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ হয়। এস আলম পরিবহনের বাসটি ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যাচ্ছিল। ওই দুর্ঘটনায়ও গেটম্যানের অবহেলাকে দায়ী করা হয়েছিল। এর আগে ২০১৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর ভোরে লেভেল ক্রসিং অতিক্রমকালে ট্রেনের ধাক্কায় ২ বাসযাত্রী নিহত ও ১৮ জন আহত হয়েছেন। তারও আগে ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর বালুবোঝাই একটি ট্রাক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তখনো দায়িত্ব অবহেলা করেছেন তৎকালীন গেটম্যান সাবের হোসেন। একই বছরের ৩১ জুলাই গেটবার না ফেলায় বিজয় এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেনের সাথে বাসের ধাক্কা লেগে অন্তত ২০ বাসযাত্রী আহত হন। এরপর গেটম্যান পালিয়ে যায়। এর আগে ২৪ জুলাই গেটবার না ফেলায় একটি মিনি পিকআপের সাথে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেন সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের ধাক্কা লাগে। তখন গেটম্যান পাশে দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন।
বারইয়ারহাট বাজারের ব্যবসায়ী শেখ ফরিদ বলেন, গেটম্যান ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। মূলত তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয় চিনকির আস্তানা রেলস্টেশনের কর্মকর্তারা জানান, মীরসরাইয়ের ৩০ কিলোমিটার রুটে অনুমোদিত লেভেল ক্রসিং মাত্র সাতটি। এর বাইরে অনেক ক্রসিং তৈরি করা হয়েছে। এগুলো বন্ধে বারবার কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নিলেও প্রভাবশালীদের কারণে কার্যকর হয় না।
বারইয়াহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন বলেন, অনেক বছর এই বাজারের রেললাইনে সবজির হাট বসতো। সেই হাট সম্প্রতি আমি রেলওয়ের সহযোগিতায় সরিয়েছি। আশা করছি অসতর্কতার কারণে ঘটা দুর্ঘটনাগুলো কমবে। তবে গেইটম্যানদের অবহেলার জন্য যদি দুর্ঘটনা ঘটে এর দায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।
চিনকি আস্তানা রেলস্টেশনের ইনচার্জ সিরাজুল হক বলেন, একসময় বারইয়ারহাট লেভেল ক্রসিংয়ে ইন্টারলগিং সিস্টেম ছিল। তবে ডাবল লাইন হওয়ার পর এটি উভয় লাইনে যুক্ত করা হয়নি। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তিনি আরো বলেন, গত ২২ জুন দুর্ঘটনার জন্য আমরা যতটুকু খবর নিয়েছি গেটম্যানের অবহেলা ছিল। সে যদি ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করত তাহলে দুর্ঘটনা ঘটত না। ইতোমধ্যে তাকে আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে।