এই দেশে সব ধর্মের মানুষই অধিকার নিয়ে থাকবে। বাংলাদেশে পরিকল্পিতভাবে বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা কখনও সফল হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই দেশের সব ধর্মের মানুষ এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এখানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার বসবাস করার অধিকার আছে। সবাই অধিকার নিয়ে বসবাস করবেন। এটাই আমরা চাই।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব জন্মাষ্ঠমী উপলক্ষ্যে গণভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এই দেশে সুপরিকল্পিতভাবে কিছু ঘটনা ঘটানো হয় সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য নিয়ে। কিন্তু যে দেশের মানুষ সবাই এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধে সবাই এক হয়ে লড়েছে, এখানে কেন এসব ঘটনা ঘটবে?’
সরকার দেশকে উন্নয়নের পথে এনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নের ছোঁয়া তো সব ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই পাচ্ছে। কেউ তো আর ভাগ করে নিচ্ছে না। তাহলে এ নিয়ে ভেদাভেদ থাকবে কেন?’
আগামী বৃহস্পতিবার পালিত হবে শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা। এটাই জন্মাষ্ঠমীর উৎসব। এই উৎসব শান্তিপূর্ণ হবে বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান মিলেমিলে বসবাসের ঐতিহ্য আছে এখানে। এটাই বাংলাদেশের শক্তি। এখানে এখানে সব ধর্মের মানুষ সব সময় সবার উৎসবে শামিল হয়েছে। এখানে দুর্গাপূজা, ঈদ, মহররম সবাই একসঙ্গে মিলে উৎযাপন করে। ধর্ম যার যার উৎসব সবার- এটাই বাংলাদেশের চেতনা।’
ওদের কোনো ধর্ম নেই
ধর্মের নামে জঙ্গি তৎপরতা নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘যারা এসব ঘটনা ঘটায় তাদের কোনো মানবতাবোধ নেই। তারা আসলে কোনো ধর্ম বিশ্বাস করে না। তাদের ধর্ম নাই, রাষ্ট্র নাই। জঙ্গিবাদই তাদের কাজ।… সব ধর্মে সহনশীলতা, ভাতৃত্ববোধ, শান্তির কথা বলা আছে।’
ইসলামি শরিয়া আইন কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়াসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে তৎপর অনেক জঙ্গি সংগঠন। মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি পশ্চিমা বিভিন্ন দেশেও তারা হামলা চালাচ্ছে। বাংলাদেশেও নব্বই দশকের শুরু থেকে কাজ করছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। সাম্প্রতিককালে তাদের হামলা আরও জোরদার হয়েছে, আরও ভয়াবহ হয়েছে।
‘কিছুদিন আগে একটার পর একটা ঘটনা ঘটে গেলো। আমরা সবাইকে আহ্বান জানালাম, সবাই এক হলেন। ঐক্য গড়ে উঠলো’-বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আর্টিজান হামলার পর জঙ্গিবিরোধী গণসচেতনতা তৈরির চেষ্টায় নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। এসব বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ। সবাই শান্তি চায়। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশে আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করবো, এটাই বাংলাদেশের শক্তি।’
জঙ্গিবাদ কেবল বাংলাদেশের নয়, বৈশ্বিক সমস্যা- এই কথাটাও মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী নানা ঘটনা ঘটছে। আমেরিকায় মসজিদের ইমামকে হত্যা করা হয়েছে। কেবল এই একটা ঘটনা নয় অনেক বাঙালি সেখানে মারা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে হত্যা করা হয়েছে।’
হিন্দু উত্তরাধিকার আইন করার পরামর্শ
শুভেচ্ছা বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। আপনাদের দাবি দাওয়া করতে হয় না। আমরা এমনিতেই সবার কল্যাণে কাজ করি। যখন ইমামদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট করেছি তখন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টানদের জন্যও করে দয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হিন্দুদের সম্পত্তি উত্তরাধিকারকে দিয়ে যেতে অনেক কর দিতে হতো। আমরা সেটা থেকে রেহাই দিয়েছি। এখন যে কেউ চাইলে সম্পত্তি দিয়ে যেতে পারে।
হিন্দু উত্তরাধিকার আইন না থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘অনেক সময় স্বামী মারা গেছে স্ত্রী করুণ অবস্থায় পড়ে যায়। সন্তানরাও দুর্দশায় পড়ে। এটা তো হতে পারে না। এর কারণ উত্তরাধিকার আইন নাই। আমরা এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু আপনাদের কাছ থেকে বাধা এসেছিল আর আমরা থেমে গিয়েছিলাম। এখন আপনারা যদি চান এই আইন হবে ‘ তিনি বলেন, ‘এই আইনের খসড়া আপনারাই তৈরি করে দেন। আমরা পাস করে দেবো। আপনারা নিজেরা তৈরি করলে সেটা সবচেয়ে ভালো হবে।’
রাধাকৃষ্ণের মূর্তি আমদানিতে কর মওকুফ চাইলে এনবিআরের কাছে আবেদন করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘
থাইল্যান্ড থেকে ২০০ বৌদ্ধমূর্তি আনার জন্য আবেদন করার পর আমরা অনুমোদন দিয়েছি।’