বিশ্বকে মহামারীর পর যুদ্ধ যে সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে , সেই প্রেক্ষাপটে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে হিসেবি গৃহস্থের পথ ধরতে দেশবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি ব্যয় কমানোর নানা পদক্ষেপ তুলে ধরার পাশাপাশি নাগরিকদের এ পরামর্শ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সঞ্চয় করতে হবে। প্রত্যেকের নিজস্ব সঞ্চয় বাড়ানো এবং প্রত্যেককে মিতব্যয়ী হতে হবে। আপনারা বিদ্যুৎ ঢালাওভাবে ব্যবহার করবেন না, পানি ঢালাওভাবে ব্যবহার করবেন না। অপচয় যেন না হয়। সকলেই কিছুটা কৃচ্ছ্র সাধন করে, কিছুটা সঞ্চয় করে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন। খবর বিডিনিউজের।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে সঞ্চয় বাড়ানোর মাধ্যমে জাতীয় সঞ্চয় নীতিতেও অবদান রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় তথা অপচয় কমানো, আমদানিকৃত বিলাসদ্রব্য ক্রয় পরিহার করে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনায় মনোযোগ দিতে হবে। সবাইকে দেশীয় পণ্য ব্যবহারের দিকে নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, কথায় কথায় বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া যাবে না। কারণ দেশে ভালো চিকিৎসা হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজার অস্থির গত কয়েক মাস ধরেই। এই পরিস্থিতিতে প্রায় সব পণ্যের দামই বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে বাংলাদেশের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যে সমস্ত জিনিস বিশেষ করে আমাদের আমদানি করতে হয়, যেমন জ্বালানি তেল, গম, ভোজ্য তেল, এলএনজি, প্রত্যেকটার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জাহাজের ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। নয়টি পণ্য একই পরিমাণ আমদানিতে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দেন তিনি, মূল্যবৃদ্ধি জনগণের উপর যে বাড়তি চাপ তৈরি করেছে, সে কারণে সরকারের ভর্তুকি বাড়ানোর ইঙ্গিতও তিনি দেন। সার, বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাসে আমাদের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। কেবল আন্তর্জাতিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে আগামী অর্থ বছরে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সার, বিদ্যুৎ খাতে যে ঘাটতি হবে, তার মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তা পর্যায়ে শতভাগ চাপিয়ে দেব না। যার ফলে আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় বাড়বে।
এই সময়ে আমদানি ব্যয় বাড়লেও তাতে সঙ্কটের চেয়ে সম্ভাবনাই বেশি দেখতে পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি মনে করি, আমরা যেহেতু বেশিরভাগই ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি করেছি, সেগুলো যখনই স্থাপন হবে, শিল্প চালু হবে, তার থেকে আমাদের দেশ লাভবান হবে। এটা করতে গিয়ে আমাদের হয়ত ডলারে কিছুটা টান পড়েছে। কিন্তু সেটা এখনও আমি মনে করি আশঙ্কাজনক কোনো বিষয় নয়। কাজেই এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
সংসদে প্রশ্নোত্তরে সরকারি দলের সংসদ সদস্য মেরিনা জাহানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুই বছর দেরি হয়েছে। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের ফলে আমাদের সেতু নির্মাণ দুই বছর বিলম্বিত হয়েছে, কিন্তু আমরা হতোদ্যম হইনি। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর মুখ দেখেছি। দেশি ও বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র এবং বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ পেয়েছে।
সংসদে রওশনের খোঁজ : সংসদ অধিবেশন কক্ষে নিজে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিলেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বিকেলে অধিবেশন শুরুর ঠিক আগে সংসদ কক্ষে ঢুকে রওশনের আসনের সামনে গিয়ে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা মতিয়া চৌধুরী এবং প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী।
রওশনপুত্র সাদ এরশাদ তার ফেসবুকে সংসদ নেতা ও বিরোধীদলীয় নেতার ছবি পোস্ট করেছেন। পরে সংসদে অর্থ বিল পাসের প্রক্রিয়ার সময় এক সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, দীর্ঘদিন পর জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা। তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিতে সংসদ নেতা নিজেই তার আসনের কাছে চলে গেছেন। এটাই হচ্ছে সংসদীয় গণতন্ত্রের বড় সৌন্দর্য। বাজেট আলোচনায় বসে বক্তব্য রাখেন তিনি।প্রায় এক বছর বুধবার সংসদে যান রওশন।