দিন দিন বাড়ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর জন্য স্পাইওয়্যার অথবা হ্যাকিং টুল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা । তবে সম্প্রতি ইতালির এক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন থেকে তথ্য চুরির জন্য হ্যাকিং টুল নির্মাণ করেছে বলে দাবি করেছে গুগল। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘আরসিএস ল্যাব’।
ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন- আজহারুল ইসলাম অভি
সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে গুগল জানিয়েছে, ইতালিভিত্তিক ‘আরসিএস ল্যাব’ নামক এক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের তৈরি হ্যাকিং টুল দ্বারা ইতালি ও কাজাখস্তানে অ্যাপলের তৈরি আইফোন এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমনির্ভর স্মার্টফোন হ্যাক করার চেষ্টা চালিয়েছে। গুগলের দাবি- নির্দিষ্ট ডিভাইস ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত মেসেজ ও কন্টাক্ট লিস্টে নজর রাখতে এক ধরনের স্পেশাল টুল বানিয়েছে আরসিএস ল্যাব। নিজস্ব ওয়েবসাইটে আরসিএস ল্যাব নিজেদের পরিচয় দেয় ‘আইনসম্মত আড়িপাতা প্রযুক্তি’র নির্মাতা হিসেবে। আরসিএস ল্যাবের আগে ইতালির বিতর্কিত স্পাই ফার্ম ‘হ্যাকিং টিম’-এর সঙ্গেও কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন গুগলের সাইবার নিরাপত্তা গবেষকরা। বিভিন্ন দেশের সরকারের জন্য মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার হ্যাক করার টুল নির্মাণ করত ওই প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালে নিজেই হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ‘হ্যাকিং টিম’। ওই সময় কোম্পানির অভ্যন্তরীণ নথিপত্র ফাঁস করে দিয়েছিল হ্যাকাররা। এর আগে গত বছর পেগাসাস স্পাইওয়্যারের কারণে আলোচনায় এসেছিল ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপ। রয়টার্স জানিয়েছে, গোপনে তথ্য চুরির সক্ষমতায় পেগাসাসের সমকক্ষ নয় আরসিএস ল্যাবের টুল। তবে এর গোপনে মেসেজ পড়ার এবং পাসওয়ার্ড চুরি করার সক্ষমতা আছে বলে নিশ্চিত করেছেন সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা সংস্থা সিটিজেন ল্যাবের জ্যেষ্ঠ গবেষক বিল মার্কজাক। আরসিএস ল্যাবের তৈরি পণ্যের ক্রেতাদের মধ্যে ইউরোপের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোও আছে বলে তথ্য এসেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্পাইওয়্যারের বেচাকেনা নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্ভাব্য নতুন আইনের কথা বিবেচনা করে দেখছেন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক ও বাজার নিয়ন্ত্রকরা। গুগল বলছে, ‘এই বিক্রেতারা বিপজ্জনক হ্যাকিং টুলের বিস্তার বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে এবং ওই সরকারগুলোকে অস্ত্রসজ্জিত করছে- যাদের নিজ উদ্যোগে এই সক্ষমতা অর্জনের উপায় নেই।’ এ বিষয়ে রয়টার্স ইতালি ও কাজাখস্তান সরকারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তাতে সাড়া দেয়নি দুই দেশ। অ্যাপলের এক মুখপাত্র বলেছেন, ওই হ্যাকিং প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার সার্টিফিকেট প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে আরসিএস ল্যাবের দাবি, ইউরোপের আইন মেনেই তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘সহযোগিতা’ করছে। রয়টার্সকে পাঠানো এক ইমেইলে কোম্পানিটি বলেছে, ‘আরসিএস ল্যাবের কর্মীদের কেউ সংশ্লিষ্ট ক্রেতার কর্মকা- সম্পর্কে অবহিত বা জড়িত নন।’ অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমনির্ভর ডিভাইসের ব্যবহারকারী ভুক্তভোগীদের ইতোমধ্যে স্পাইওয়্যার সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে গুগল। এ প্রযুক্তি জায়ান্টের ধারণা, আরসিএস স্পাইওয়্যার ভুক্তভোগীর ‘ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি)’-এর সঙ্গে কাজ করত। এ ক্ষেত্রে আরসিএস ল্যাবের পেছনে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সমর্থনের ‘স্পষ্ট ইঙ্গিত’ মেলার কথাও বলেছেন গুগলের জ্যেষ্ঠ সাইবার নিরাপত্তা গবেষক বিলি লিওনার্ড।