পদ্মা সেতু নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে অবশেষে সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। মেলবন্ধন ঘটিয়েছে পদ্মার দুই পারের। আজ সেতুর উদ্বোধন। দেশের সাধারণ মানুষের মতো পদ্মা সেতু নিয়ে উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চলের তারকারা। লিখেছেন- ফয়সাল আহমেদ, তারেক আনন্দ ও শিমুল আহমেদ
জয়া আহসান
পদ্মার সঙ্গে মিলেমিশে থাকে জেলেদের ইলিশ ধরার আনন্দ। সেই পদ্মা নদীর দুই পার এবার যুক্ত হলো সেতুবন্ধে। পদ্মার প্রকৃতির কারণে এই সেতু গড়ে তোলা ছিল দুঃসাধ্য। আর সেতুটি তো দক্ষিণবঙ্গের বিপুল জনপদকে বিচ্ছিন্নতা থেকে উদ্ধারের এক পরম পথ। পদ্মা সেতু রচনায় যে অনমনীয় নেতৃত্বের প্রয়োজন ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থির প্রতিজ্ঞায় বীরের মতো সেটা দিয়ে এসেছেন।পদ্মার দুই পার আলিঙ্গন করুক। সমস্ত পথে দেশের মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধ গড়ে উঠুক।
অলিউল হক রুমি
নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে অবশেষে চালু হতে যাচ্ছে আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বিষয়টি আমার জন্য অনেক আনন্দের। বাংলাদেশি হিসেবে আমি গর্বিত। আমি মনে করি, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে এ এক আশীর্বাদ। আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সারাজীবন এই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। আর এটা তো বাস্তব যোগাযোগ ব্যবস্থা যত উন্নত হবে, তত ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। বাংলাদেশের গৌরবের প্রতীক হচ্ছে পদ্মা সেতু। অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষীত সেতুটি চালু হতে যাচ্ছে। পৃথিবীতে অসংখ্য সেতু রয়েছে। দৈর্ঘ্যরে দিক বিবেচনায় পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে বিশ্বের ১২২তম দীর্ঘ সেতু। সুইডেনের অল্যান্ড ব্রিজকে পেছনে ফেলে এই জায়গা দখল করে নেবে বাংলাদেশ। আমি ভীষণ খুশি।
মীর সাব্বির
আমার কাছে গত কয়েকদিন ধরেই ঈদ ঈদ লাগছে। স্বপ্নের এই সেতুটির উদ্বোধন হওয়ার পর দুর্ভোগ লাগব হবে। আমাদের অঞ্চল থেকে শুরু করে পদ্মার ওপারে যারা থাকে তাদের যে কত বড় উপকার তা বলে বোঝানো যাবে না। অনেকেই মজা করে প্রায়ই আমাদের বলে থাকে, ‘আইতে সাল যাইতে সাল, তার নাম বরিশাল।’ এখন সেই মজা আর আমাদের সঙ্গে কেউ করতে পারবে না। এখন বরগুনা যেতে সময় লাগবে ৫-৬ ঘণ্টা। মজা করে ঢাকায় বসে এখন আমরা বলব, দাঁড়ান আসতেছি। প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের জন্য তার এই উপহার আশীর্বাদ।
অহনা
আমার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। ফলে পদ্মা পাড়ি দিয়ে গ্রামে যেতে হয়। এখন খুব সহজে সেতু পার হয়ে গ্রামের বাড়ি যেতে পারব, ভাবতে আনন্দ লাগছে। শুধু গ্রামের বাড়ির যাওয়াই নয়, শুটিংয়ের কাজেও প্রায়ই আমাদের পদ্মার ওপারে যেতে হয়। সেক্ষত্রে শিল্পীদের অনেক সময় নষ্ট হয়। এখন আমাদের সকল কষ্ট ঘুচাবে। আমরা এখন চাইলেই অল্প সময়ে চলে যেতে পারব পদ্মার ওপারে। বিশ্বাস করুন, এখনো আমার কাছে পুরো বিষয়টি স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। আর অপেক্ষায় আছি কবে গ্রামে যাব। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিলেও কম হয়ে যায়। আমি বলে বোঝাতে পারব না, প্রধানমন্ত্রী কত বড় উপকার করলেন।
চম্পা
আমার গ্রামের বাড়ি যশোর। সেখানে যেতে হলে কত সময় লাগে সেটা সবার জানা, রাতে রওনা হলে সকালে গিয়ে পৌঁছতে হয়। আর দিনের বেলায় তো রাস্তায় যানজট থাকে। তাই রাতেই বেলাই বেশি যাওয়া হয়। আর দীর্ঘ সময়ের যাত্রাপথ দেখে খুব একটা গ্রামে যাওয়া হয় না। এখন পদ্মা সেতু আমাদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে আসছে। আর এই সেতু ঘিরে আমাদের সবার আবেগ-ভালোবাসা মিশে আসে। আমি অধীর অপেক্ষায় আছি, কবে সেতু পাড়ি দিয়ে বাড়ি যাব। আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে আর দেরি নাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে সাহস নিয়ে দেশের অর্থায়নে সেতু তৈরির কাজ শুরু করেছে তা সত্যি প্রশংসনীয়। প্রধানমন্ত্রী কতটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই সেতুটি করেছে তা আমরা সবাই জানি। উনার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার মতো না। সবশেষে বলব, আমাদের দীর্ঘদিনে স্বপ্ন বাস্তব করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
মোশাররফ করিম
ফেরি মানেই ঘাটে ভোগান্তি, ধীরগতির নদী পারাপার, ঘন কুয়াশা, ঝড় ও দুর্যোগে যাত্রা বাতিল। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলায় যাতায়াতে ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো মানুষকে, পণ্যবাহী ট্রাককে। এই ভোগান্তি আর থাকছে না। ঈদের আগে ঈদ এখন আমাদের কাছে। এখন আমাদের বরিশাল আসা-যাওয়া নিয়ে কোনো কথা কেউ বলবে না। আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তব করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা খুবই আনন্দিত।
কাজী শুভ
এখন আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিঘাটে বসে থাকতে হবে না। আমার বাড়ি যেহেতু গৌরনদী, ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টায় বাড়ি চলে যেতে পারব এটা ভাবলেই খুব আনন্দ লাগে। তাছাড়া দক্ষিণ বঙ্গে শো থাকলেও খুব চিন্তায় থাকতাম, ফেরিঘাটের ভয়ে। এখন আর সেই চিন্তা থাকবে না। একজন বাংলাদেশি এবং একজন দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ হিসেবে গর্ববোধ করছি। স্বপ্নের সেতুর বুকের ওপর দিয়ে স্বপ্নবুকে খুব দ্রুত ফিরব ঘরে। সোনার বাংলার স্বপ্নের সেতু পদ্মা সেতু।
রাফাত
এখন আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা কষ্ট করতে হবে না কিংবা সারারাত ধরে জার্নি করতে হবে না, মন চাইলে সকালে এসে কাজ শেষ করে বিকালে বাড়িফেরা যাবে। আমার বাড়ি যেহেতু বরিশাল সদরে, ৪ ঘণ্টায় বাড়ি চলে যেতে পারব। ধরতে গেলে জ্যামের সময় মগবাজার থেকে উত্তরা যাওয়ার সময়। ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্পকারখানা আরও অনেক বাড়বে কর্ম সংস্থান বাড়বে। এটা ভাবলেই খুব আনন্দ লাগে।