ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা আকাশে মেঘ দেখলেই জলাবদ্ধতার আতঙ্কে ভুগছেন । চাক্তাই খালের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বাজারে গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে বলছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায়ও জোয়ারের পানির ধাক্কায় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের নিম্নাঞ্চল হাঁটু পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে গত ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চাক্তাই খালের কর্ণফুলী মোহনায় জোয়ারের পানি প্রতিরোধক স্লুইচ গেট নির্মাণ কাজ শুরু করে। কিন্তু এখনো সেই নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। ফলে এই বর্ষায়ও ভুগতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। গত দুইদিন আগে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির ধাক্কায় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের নিচু এলাকার অনেক দোকান-গুদামে পানি প্রবেশ করে। পানিতে ব্যবসায়ীদের অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এক সময় চাক্তাই খাল দিয়ে নৌপথে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য হত। কালের পরিক্রমায় সেই চাক্তাই খাল চীনের দুঃখ হোয়াংহো নদীর মতো চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের দুঃখে পরিণত হয়েছে। এছাড়া খালের দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, পলি জমে খাল ভরাট হয়ে যাওয়া এবং তলা পাকা করার কারণে স্থায়ীভাবে নাব্যতা হারিয়েছে চাক্তাই খাল। ফলে নৌ-বাণিজ্য বর্তমানে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। অপরদিকে স্লুইচগেট নির্মাণের জন্য খালের একাংশ ভরাট করার কারণে ব্যাহত হচ্ছে নৌপথে পণ্য পরিবহন। বাধ্য হয়ে চাক্তাই মোহনা পেরিয়ে পণ্য লোড-আনলোড করতে হয়। এতে পণ্য পরিবহনে খরচও বেড়ে গেছে।
চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক উল্লাহ বলেন, সিডিএ স্লুইচ গেট নির্মাণের জন্য খালের একাংশ ভরাট করেছে, ফলে খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যে কারণে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতার পরিমাণও বেড়ে গেছে। এ ছাড়া পানি নামতেও সময় লাগছে। তাই আমাদের দাবি, দ্রুত স্লুইচ গেট নির্মাণ শেষ করে খালের পানির চলাচল যেন স্বাভাবিক করা হয়।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। সেই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় দোকান-গুদামের প্রবেশমুখও উঁচু করেন। কিন্তু প্রতি বছরই বাড়ে জোয়ারের পানির উচ্চতা। নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে এখনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। এটি খুবই দুঃখজনক। খাতুনগঞ্জ ট্রেড ও ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন আজাদীকে বলেন, দখল ও দূষণে চাক্তাই খালের অবস্থা খুবই শোচনীয়। খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির ধারণ ক্ষমতাও কমে গেছে। তাই যখন ভারী বৃষ্টিপাত হয়, তখন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের নিম্নাঞ্চল হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া জোয়ারের পানির চাপ তো আছেই।
উল্লেখ্য, ব্যবসায়ীরা তিনশ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েন গত ২০১৭ সালের জুন-জুলাইয়ে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ।