গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকেও মদ্যপানরত অবস্থায় সাভারের বাইপাইল ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে এসে টিআই জামান তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় করিম সুপার মার্কেটের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা ক্ল্যাসিক পরিবহন নামের একটি স্থানীয় পরিবহনে অকারণে ভাঙচুর করেন তিনি। ভেঙে দেন জানালার কাচ, হেডলাইট ও ব্যাকলাইট। এতে পরিবহনটির অসহায় শ্রমিকরা এগিয়ে এসে বাধা দিলে তাদেরকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেন তিনি। এ সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকটি স্থানীয় পরিবহনেও তিনি ভাঙচুর চালান। পরে টিআই সাহেবের বেগতিক ভাব দেখে সেখান থেকে পালিয়ে যান পরিবহনটির শ্রমিকরা।
মদ খেয়ে মাতাল হয়ে প্রায়ই নাকি তিনি লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়ে থাকেন। ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. জামানের বিরুদ্ধে এ ধরনের ভুড়ি ভুড়ি অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। মদ্যপান করে তিনি কখনো চাঁদা দাবি করেন, কখনো পরিবহন শ্রমিকদের বেধড়ক মারধর করেন। এমনকি তার মাতলামির শিকার হয়ে বিভিন্ন সময় অকারণে বেধড়ক পিটুনি খেয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও।
ক্ল্যাসিক পরিবহনের চালক হারুনুর রশিদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘স্যার রাইতের বেলা আমাগো কিছু না কইয়াই গাড়ি ভাঙতে শুরু কইরা দিলো। আমরা দৌড়াই গিয়াও হ্যারে থামাইতে পারিনাই। উল্টা আমাগো চর, থাপ্পর, লাথি আর ঘুষি মাইরা তাড়ায় দিছে।’
একই পরিবহনের কন্ডাক্টর আপন বলেন, ‘এর আগেও টিআই জামান অনেক বার মদ খেয়ে বাইপাইল স্ট্যান্ডে এসে মারধর ও গাড়িতে ভাঙচুর করেছেন। কিন্তু ওনারা তো বড় মানুষ, পুলিশ। তাই তাদের অপরাধ দেখার কেউ নাই। ওনারা কারণে-অকারণে মারবে, আর আমরা মুখ বুঝে সয়ে গাড়ি চালাবো।’
এরপর ঢুলতে ঢুলতে টিআই জামান ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পেছনে এসে তার অনুচর সোহেলকে খুঁজতে থাকেন বলে জানান কুলসুম বেগম নামে এক চা দোকানি। এসেই তার দোকানের কাস্টমারদের হঠাৎ মারধর শুরু করেন। এ সময় তাকেও দোকান বন্ধ করতে বলে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ দিতে থাকেন ওই টিআই। পরে সামনে যাকেই পেয়েছেন যাত্রী থেকে শুরু করে পথচারী ও পরিবহন শ্রমিক অনেককেই মাতাল অবস্থায় পেটাতে থাকেন তিনি। এমন বেগতিক অবস্থা পুলিশের একটি গাড়ি এসে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার রাতে টিআই জামান মূলত মদ্যপান করে তার বিশ্বস্ত অনুচর সোহেলকে যারা চাঁদা দিতে রাজি হয়নি তাদের খুঁজছিলেন। সোহেল নামের এই ব্যক্তিই টিআই জামানকে স্ট্যান্ডের পরিবহন থেকে চাঁদা তুলে দেয় বলে অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী। গত দুই মাস আগেও টিআই জামান বাইপাইলের মোল্ল্যা নামে একটি ছোট্ট হোটেলে মদ্যপানরত অবস্থায় ফ্রিজ ও জিনিসপত্রে ভাঙচুর চালান। যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশও হয়েছে। কিন্তু এরপরও মদ্যপান করে বেপরোয়া স্বভাব টিকিয়ে রেখেছেন তিনি। প্রায়ই কাউকে না কাউকেই তার অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে মুখ বুঝেই।
তবে এতসব অভিযোগের ব্যাপারে নবীনগর বাসস্ট্যান্ডে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
এ ব্যাপারে সাভার ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ টিআই ফরহাদ হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি ব্যাপারটি শুনেছি। ঘটনাটি তদন্তসাপেক্ষ রয়েছে। তবে টিআই জামানের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’