দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে চট্টগ্রামের পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে এসে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। এ জন্য চলতি সপ্তাহেই পাহাড়ে বসবাসকারী পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হচ্ছে। যা আগামী এক মাসের মধ্যে প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে। এরপর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৪ তম সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে জানান বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন। গতকাল বিকালে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানসহ রেলওয়ে, চট্টগ্রাম ওয়াসা, বিদ্যুৎ, কর্ণফুলী গ্যাস, সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। সভায় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের ৫ জেলার পাহাড়ে বসবাসকারীদের পুনর্বাসন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক ও আগ্রহী। আশা করছি, এ বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে।

বর্ষা শুরু হলেই পাহাড় নিয়ে সর্বত্র দুশ্চিন্তা বাড়ে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের পাহাড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এ দুশ্চিন্তা, আতংক হ্রাসে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে গত ২৭ মার্চ পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৩ তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, রেলওয়েসহ সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলো ১৫ এপ্রিলের মধ্যে পাহাড়ে থাকা অবৈধ স্থাপনাগুলোর তালিকা দেবে। এরপর রোজার ঈদের পর পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সেবা সংস্থাগুলো বেঁধে দেয়া সময়ে স্থাপনার তালিকা দেয়নি। যার কারণে অভিযান পরিচালনা করতে পারেনি প্রশাসন। এর মধ্যে গত শুক্রবার ও গত সোমবার পাহাড় ধসে পাঁচজনের মৃত্যু দেখতে হয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী বেঁধে দেয়া সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এ ঘটনা ঘটতো না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ঠিক এ অবস্থায় গতকালের ২৪ তম সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে চলতি সপ্তাহে সেবা সংস্থাগুলো পাহাড়ে বসবাসকারীদের তালিকা দিয়েছেন এমন তথ্য পাওয়া গেছে সভায়। সভা থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন পাহাড়ে বসবাস করেন ১৪৬ টি পরিবার, গণপূর্তের পাহাড়ে ৮৮ টি, রেলওয়ের পাহাড়ে (ফয়ে’স লেকের বিজয় নগর পাহাড়, আকবরশাহ’র ১ নম্বর, ২ নম্বর, ৩ নম্বর ঝিল পাহাড়, মতিঝর্ণার পাহাড়, বাটালি হিল ও সিআরবি পাহাড়) প্রায় ৩ হাজার ও সিটি কর্পোরেশনের পাহাড়ে ১৫০ টি পরিবার বসবাস করে। চট্টগ্রাম ওয়াসার ৫ টি পাহাড় থাকলেও এসব পাহাড়ে বৈধ, অবৈধ কোনো বসতি নেই বলে সভায় জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রতিনিধি। সভায় ওয়াসা ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পাহাড়ে তাদের কোনো সংযোগ নেই। তবে সেখানে টিউবওয়েল ও সিলিন্ডারের ব্যবহার রয়েছে। এনজিওসহ সংশ্লিষ্ট কিছু লোক এর পেছনে কাজ করছে। পাহাড়ে কিছু সংখ্যক বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে বলে স্বীকার করে নেন বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধি। এক ধরণের স্ট্যাম্প দাখিলের পর এসব সংযোগ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবৈধ সংযোগ আমরা বিচ্ছিন্ন করে আসছি। মতিঝর্ণায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। এ বক্তব্যের পর বিভাগীয় কমিশনার বলেন, স্ট্যাম্প জমা নিয়ে সংযোগ দেযার সুযোগ নেই। এ সব বন্ধ করতে হবে। বিভাগীয় কমিশনার আরো বলেন, ইউটিলিটি সেবা বন্ধ করে দিলে ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে কেউ বসবাস করবে না। পাহাড়ে কোনোভাবেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বিষয়টি আমরা উপরে জানাব, অবহিত করব। নির্দেশনা পেলে এ বিষয়ে স্থায়ী সমাধানে কাজ করা হবে।

চট্টগ্রামে অবৈধ বসতি রয়েছে ২৮ টি পাহাড়ে উল্লেখ করে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, এ সব পাহাড় দেখভালে কাজ করে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। এ কমিটির ফান্ডে ৯৩ লাখ টাকা রয়েছে। কিন্তু আমরা সেগুলো ব্যয় করতে পারছিলাম না, কোন ধরণের নীতিমালা বা গাইডলাইন না থাকায়। এ জন্য গত সভায় একটি সাব কমিটি করা হয়। এখন আমাদের গাইডলাইন রয়েছে। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ব্যয় নির্বাহ করা, মানুষকে উদ্ধার করা এবং তাদের সহযোগিতা নিশ্চিত করতে এই ফান্ড কাজে দিবে। পাহাড়ে বসতি স্থাপনের পেছনে কারা সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তা তো তদন্তের বিষয়। তদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না। সভায় জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, অতি ঝুঁকিপূর্ণ আকবরশাহ’র ঝিল নামের পাহাড় থেকে অসংখ্য স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। বাকীদের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। আমরা শুক্রবার আবারো অভিযানে যাব।

এক নজরে সভার সিদ্ধান্তগুলো : পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৪তম সভায় আলোচনা শেষে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে, রেলওয়েসহ সংশ্লিষ্টদের দাখিল করা তালিকা সমন্বয় করে হালনাগাদ করা, বনবিভাগের পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের তালিকা করা, বায়েজিদ লিংক রোডের আলোচিত খাড়া পাহাড়ের ঝুঁকি হ্রাসে ১৩ সদস্যের কমিটি গঠন, সম্প্রতি যে পাহাড় থেকে স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে সেখানে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ ও গাছ লাগানো এবং পাহাড় থেকে অবৈধ বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা।

প্রসঙ্গত, ভারী বর্ষণ শুরু হলে গত শুক্রবার রাতে আকবরশাহ’র ১ নম্বর ঝিল এলাকার পাহাড় ও ফয়ে’স লেকের বিজয় নগর এলাকার পাহাড়ে ধসের ঘটনা ঘটে। এছাড়া গত সোমবার ভোরে চশমা হিল এলাকার একটি পাহাড় ধসে মৃত্যু হয় এক শিশুর।এতে চারজনের মৃত্যু হয়।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031