ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তৃতায়  বলেছেন, তাকে হত্যা করার জন্য বারবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু জাতির জনকের কন্যা হিসেবে আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে মাথা নত করবেন না তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই আমাদের লক্ষ্য। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করার পর দেশকে ভিন্ন কায়দায় পরিচালনা করা হচ্ছিল। এরপর ২১ আগস্ট আসে চূড়ান্ত আঘাত। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ধ্বংস করার জন্য সেদিন গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।”

মৃত্যুকে ভয় করেন না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, “এর আগেও কোটালীপাড়ায়ও আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে বিশাল বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। একজন চায়ের দোকানদার তা দেখায় আমি তখন প্রাণে বেঁচে যাই।”

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রথম তিনটা গ্রেনেড পর পর নিক্ষেপ করা হয়। একটু বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয়। মনে হচ্ছিল যেন গ্রেনেড বৃষ্টি হচ্ছে। গ্রেনেড বিস্ফোরণ যেন আর থামছিলই না।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের ট্রাকের চারপাশে ১১টি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটেছিল। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল যে কিয়ামত চলছে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে। একপর্যায় আমাদের নিরাপত্তা কর্মীরা যখন গুলি ছুড়তে শুরু করে, তখন গ্রেনেড বিস্ফোরণ থামে। সিঁড়িতে যারা ছিল তাদের সবার গায়েই স্প্লিন্টার লেগেছিল।”

আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে ২০০৪ সালের এই দিনে একটি ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে তখন বক্তৃতা করছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেদিনের সেই দুঃসহ স্মৃতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি যখন সন্ত্রাসবিরোধী বক্তৃতা করছিলাম, তখন আমার পাশেই ছিলেন ঢাকার সাবেক মেয়র হানিফ ভাই। আমি দেখছিলাম তার মাথায় ও শরীরে বৃষ্টির মতো স্প্লিন্টার এসে পড়ছে। একপর্যায়ে আমি যখন গাড়িতে উঠি, তখনো গ্রেনেডের সঙ্গে বৃষ্টির মতো গুলিও ছোড়া হচ্ছিল। আমাকে নিয়ে গাড়ি যখন আমার বাসায় আাসে, তখন আমার গাড়ি বসে যায়। আমার গাড়ির টায়ারগুলোও স্প্লিন্টার বিঁধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

ওই দিন পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ রকম একটি ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আচরণ আমাকে অবাক করেছে। আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে তখন শুধু লাশ আর লাশ। পুলিশ হতাহতদের উদ্ধার না করে টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এর মধ্য দিয়ে উদ্ধার অভিযানে বাধা দেয়া হয় ইচ্ছাকৃতভাবে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সমাবেশে সব সময় হাজার হাজার পুলিশ দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হতো। কিন্তু সেদিন কোনো পুলিশ ছিল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের ছাদে যেতে দেয়নি। এটা কেন দেয়া হয়নি? পুলিশ সেদিন নীরব ছিল। নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে।”

বিচারকাজকে বাধাগ্রস্ত করার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন. ‘সেদিনের সব আলামত সরিয়ে ফেলা হয় সঙ্গে সঙ্গে। আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্যোগে কিছু আলামত তখন রাখা হলেও পরে তা ধ্বংস করা হয়। আস্ত গ্রেনেড আলামত হিসাবে রাখার কথা থাকলেও তা ধ্বংস করা হয়। আলামতগুলো নষ্ট করা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে। সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে এতোগুলো গ্রেনেড আনা হলো কীভাবে-প্রশ্ন করে তিনি বলেন, সবকিছুই হয়েছে পুলিশের ছাত্রছায়ায়।

‘সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে- হামলার কোনো তদন্ত না করে উল্টো এই হামলার জন্য আমাদের ওপর দোষ চাপানো হয়। বলা হয় আমরাই নাকি এই সমাবেশে হামলা করেছি। আমাদের সব নেতাকর্মী সেদিন সমাবেশে ছিল এবং আমিও ছিলাম। এ রকম একটি সমাবেশে আমরাই হামলা করেছি! এটাও কি সম্ভব!’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বিএনপির নেত্রীর এ ধরনের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, ‘তাহলে আমরা কি সেই দিন সুইসাইট করার জন্য গিয়েছিলাম যে আমাদের সমাবেশে আমরাই হামলা করলাম?’

প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘পার্লামেন্টে এ নিয়ে কোনো কথা বলতে পর্যন্ত দেয়া হয়নি আমাদের। তাছাড়া তদন্তের নামে জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছিল।  ২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর আমদের পার্লামেন্টে শুধু কথা বলতেই বাধা দেয়নি তারা একটি নিন্দা প্রস্তাবও আনতে দেয়নি।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তখন আমাকে উদ্দেশ্যে করে বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা সামনে বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবেন না। আমাকে হত্যা করা হবে বলেই এমন কথা খালেদা জিয়া তখন বলেছিলেন।’

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় হতাহতে বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইভী রহমানসহ ২২ জন নিহত হয় এবং বহু লোক আহত হয়। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে তখন গ্রেনেড হামলার আহতরা।’  তখন তিনি বিএনপিমনা ডাক্তারদের ‘অমানবিক’ আচরণের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘বিএনপি মনোভাবাপন্ন ডাক্তাররা তখন গ্রেনেড হামলায় আহতরা চিকিৎসা পর্যন্ত করেননি। পিজিতে তো এই রোগীদের ঢুকতেই দেয়া হয়নি। আমরা এই বর্বরতা আর চাই না।’

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031