পাইলসে মলাশয়ের রোগগুলো হলো- এনাল ফিসার, পাইলস, রেক্টাল পলিপ, রেক্টাল ক্যানসার, আইবিএস, পাইলোনিডাল-সাইনাস, এনাল অ্যাবসেস, রেক্টাল প্রলাপস, এনাল ওয়াট ইত্যাদি। এসব রোগের মধ্যে সাধারণত রোগীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন। এ রোগের বিজ্ঞানসম্মত কিছু চিকিৎসা রয়েছে এবং নিয়ম অনুসরণ করে রোগটির যথাযথ চিকিৎসা করলে সহজেই পাইলস থেকে মুক্ত থাকা যায়।
পাইলস হয়ে গেলে বেশি চিন্তার প্রয়োজন নেই। সাধারণত মলাশয়ের একটি সাধারণ রোগ হলো পাইলস রোগ। এ রোগটি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। উপসর্গ অনুযায়ী ৯০ শতাংশ পাইলসের রোগী সার্জারি ছাড়াই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে সুস্থ হয়ে ওঠেন। জটিলতা তৈরি হয় পাইলসের অপচিকিৎসায়। সাধারণত যেসব পাইলস ভেতরে থাকে, তা হলো ইন্টারনাল পাইলস আর যেসব পাইলস থাকে বাইরের দিকে, তা হলো এক্সটার্নাল পাইলস বা এক্সটার্নাল হিমোরয়ডেকটমি।
উপসর্গ : মলত্যাগের পর রক্ত যাবে, রক্ত যাওয়ার সঙ্গে কোনো ব্যথা হয় না। অনেক সময় বেশি রক্তও যায়। পাইলস যদি প্রথম ধাপে হয়, তবে মলদ্বারে বাড়তি মাংসের মতো কোনো কিছু থাকে না। শুধু মলত্যাগের পর তাজা রক্ত যায়। যদি দ্বিতীয় গ্রেডের হয়, তাহলে মলত্যাগের পর তাজা রক্ত যায়, ব্যথা হয় না। মলত্যাগের পর মনে হয়, ভেতর থেকে কী যেন বাইরের দিকে বের হয়ে আসে এবং সেটি এমনিতেই ভেতরে ঢুকে যায়। কারও যদি তৃতীয় ধাপের পাইলস হয়ে থাকে, তবে মলত্যাগের পর বাড়তি মাংসের মতো বের হয়। আগে এমনিতেই ঢুকে যেত, এখন চাপ দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হয়। যদি চতুর্থ ধাপের পাইলস হয়, সেক্ষেত্রে আগে মলত্যাগের পর বাড়তি যে মাংস বের হতো, তা আর ঢুকবে না। অনেক সময় পাইলসের ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। এতে রক্তক্ষরণ হয়। এর নাম থ্রবোসড পাইলস। রোগটির চিকিৎসা নির্ভর করে উপসর্গ ও ধরনের ওপর। সার্জারি করতে হবে কিনা, তা পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা নির্ধারণ করে থাকেন।
শল্য চিকিৎসা : যদি প্রথম ধাপের পাইলস হয় এবং রোগী শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে আসেন, তবে কোনো অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। এ ধরনের রোগীকে ওষুধ দেওয়া হয় এবং মল স্বাভাবিক করতে নরম খাবারসহ শাকসবজি, পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে, তাহলে মল নরম করতে চিকিৎসক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন। সাধারণত প্রথম ধাপের পাইলস প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী ভালো হয়ে যান। যদি ওষুধে কাজ না হয়, তখন সেক্লরো থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। যেমন রিং লাইগেশন, ইনজেকশন। যদি দ্বিতীয় ধাপের পাইলস হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রেও অপারেশন করতে হয় না। কিছু আধুনিক চিকিৎসার সহায়তা নেওয়া হয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের পাইলস হলে অপারেশনের প্রয়োজন হয়। তার আগে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হয়। সার্জারি করতে হলে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে করা ভালো। সর্বাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি স্টেপলড হিমোরয়ডেক্টমি। এর মাধ্যমে বাইরের কোনো কাটাছেঁড়া হয় না, মলদ্বারের ভেতর থেকে একটু বাড়তি মাংসের মতো জিনিস কেটে নিয়ে আসা হয়। সাধারণত মলত্যাগের পর তেমন ড্রেসিংয়ের প্রয়োজন হয় না। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। সাত দিন পর থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরতে পারেন। তবে কারও যদি মলদ্বারটি একদম বাইরে বের হয়ে আসে এবং ইনফেকশন হয়, তাহলে কেটে অপারেশন করতে হয়।
তাই মলদ্বারে পাইলস হলে অপারেশন লাগবেই, তা কিন্তু নয়। চিকিৎসক নির্ণয় করবেন পাইলস কোন পর্যায়ে আছে, কোন ধরনের চিকিৎসা লাগবে। মলদ্বারে পাইলসজনিত কোনো সমস্যা হলে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নিলে সার্জারি প্রয়োজন নাও হতে পারে।