হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যা মামলায় তাদের দুই সন্তানকে মাগুরা জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে বলে । বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেন।
স্থান নির্ধারণের পাশাপাশি শিশুদের বিবৃতি রেকর্ডের ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তার প্রতি কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। মাহমুদা খানম হত্যা মামলায় গত ১৬ মার্চ দুই সন্তানকে শিশু আইন মেনে সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ। বিচারিক আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট আবেদন (রিভিশন) করেন বাবুলের বাবা আবদুল ওয়াদুদ মিয়া ও বাবুলের ভাই হাবিবুর রহমান। এই আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল আদেশ দেয়া হয়। খবর বাসসের।
আদালত বলেছেন, তদন্ত কর্মকর্তা শিশুদের বিবৃতি রেকর্ড করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে শিশু আইনের বিধানগুলো অনুসরণ করতে হবে। বিবৃতি রেকর্ডের জন্য মাগুরা জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়কে স্থান হিসেবে নির্ধারণ করে দেন আদালত।
নির্দেশনায় হাইকোর্ট বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের তারিখ নির্ধারণের অন্তত তিন দিন আগে তা জানিয়ে দিতে হবে। নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে দাদা শিশুদের মাগুরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে হাজির করতে বাধ্য থাকবেন। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের গড়িমসি বা টালবাহানা করা যাবে না। জিজ্ঞাসাবাদের আগে শিশুদের আলাদাভাবে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে বেশকিছু সময় রাখতে হবে বলেও উল্লেখ করেছেন আদালত।
আদেশে আদালত বলেন, শিশুদের বিবৃতি রেকর্ডের সময় শুধু দাদা থাকবেন। চাচা বা অন্য কোনো ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা ও জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বা তাঁর মনোনীত কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন।
শিশুদের নিরাপত্তা ও শিশুরা যাতে কোনো ধরনের মানসিক চাপ অনুভব না করে, সে বিষয়ে সবাই দৃষ্টি রাখবেন। শিশুদের বিবৃতি রেকর্ডের জন্য নোটিস ইস্যুসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালত বলেছেন, শিশুদের বিবৃতি রেকর্ডের পর কোনো ধরনের দেরি ছাড়া যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন। শিশুদের বিবৃতি রেকর্ড বিষয়ে আদেশ বাস্তবায়ন নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে ২৬ জুলাই প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। ২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় খুন হন মাহমুদা।
পরদিন ৬ জুন মাহমুদার স্বামী বাবুল বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। তদন্ত শেষে পিবিআই এই মামলায় গত বছরের ১২ মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। একই দিন বাবুলের শ্বশুর ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন পাঁচলাইশ থানায় আরেকটি হত্যা মামলা করেন।
মোশাররফের মামলায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করা হয়। মোশাররফের করা মামলায় পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিলে ২০২১ সালের ৬ মার্চ তা গ্রহণ করেন আদালত। বাবুলের করা মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে। বাবুল কারাগারে রয়েছেন।অন্যদিকে বাবুলের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালত গ্রহণ করেননি।