কারও পা নেই , কারও হাত উড়ে গেছে, ; সঙ্গে পোড়া শরীরের আহাজারি দানবীয় বিস্ফোরণে। চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোর মর্গও লাশে ভরা। নিহতদের স্বজনদের আহাজারি আর দগ্ধ মানুষের আর্তনাদে ভারী চট্টগ্রামের বাতাস। সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের পর মালিকপক্ষ ঘটনাস্থলে যায়নি। কর্মকর্তারা পালিয়ে যাওয়ায় ডিপোতে বিস্ফোরক হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের কনটেইনার থাকার বিষয়টিও জানতেন না ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা।
ডিপো পরিচালনার অব্যবস্থাপনায় আর অনুমোদনহীন বিস্ফোরকের বিস্ফোরণে ৪৯ জন নিহত ও আহত হয়েছে তিন শতাধিক। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিসকর্মী। নিখোঁজ ফায়ার সার্ভিসকর্মীর সংখ্যা ১২ জন। হতাহতদের স্বজনদের প্রশ্ন, এ মৃত্যুর দায় কে নেবে?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিপোতে বিস্ফোরক হাউড্রোজেন পারঅক্সাইড মজুদের কোনো অনুমোদন ছিল না। বিস্ফোরক মজুদের বিষয়টি বিস্ফোরক অধিদপ্তরকে জানানো হয়নি। বিস্ফোরকের বিষয়টি জানত না ফায়ার সার্ভিসও। আগুন লাগার পর হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের বিস্ফোরণের ফলে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। মালিকপক্ষের অসহযোগিতা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাব, কনটেইনার সরানোর যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে না পারা এবং কোন কনটেইনারে কী ধরনের কেমিক্যাল রয়েছে, তা নিশ্চিত হতে না পারায় গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ঘটনাটি নাশকতা, নাকি দুর্ঘটনা খতিয়ে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
দুর্ঘটনায় আহত লরি চালক তোফায়েল আহমেদ বলেন, তিনি দূরে দাঁড়িয়ে ফায়ার সার্ভিসের আগুন নেভানো দেখছিলেন। এ সময় হঠাৎ প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে তিনি প্রায় ২০ হাত দূরে উড়ে গিয়ে পড়ে। মনে হচ্ছিল কেয়ামত শুরু হয়েছে। বিস্ফোরণে তার হাত ও পা দগ্ধ হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বিস্ফোরণে কনটেইনার ডিপোর আশপাশের তিন থেকে চার কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক কম্পনের সৃষ্টি হয়। শব্দ শোনা গেছে ২০-২৫ কিলোমিটার দূর থেকে। মসজিদ ও আশপাশের শতাধিক ঘরবাড়ির জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। নষ্ট হয়ে যায় আশপাশের এলাকার অনেক টিভি ও ফ্রিজ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে একটি কনটেইনার থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। ধোঁয়ার কারণ অনুসন্ধান কিংবা কনটেইনার সরিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ অবস্থায় রাত সোয়া ১০টার দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে পুরো ডিপোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত ফায়ার সার্ভিসেরকর্মীরা। তারা আগুনের ওপর দ্রুত পানি ছিটাতে শুরু করেন। এর পর শুরু হয় চূড়ান্ত ধ্বংসযজ্ঞ। একের পর এক শক্তিশালী শব্দে বিস্ফোরণ হতে থাকে
ডিপোতে থাকা হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের ড্রামগুলো। এতে পাল্লা দিয়ে ছড়াতে থাকে আগুন। এ আগুন ও বিস্ফোরণে আশপাশের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাড়িঘরের দরজা জানালা ভেঙে চুরমার হয়। এতে উপজেলাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান হাজার হাজার নারী পুরুষ। বিদ্যুৎ চলে গিয়ে পুরো এলাকা মুহূর্তেই অন্ধকারে ডুবে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাসায়নিক পদার্থের ছিন্নভিন্ন ড্রাম, ধ্বংস হওয়া কাভার্ডভ্যান ও পুড়ে বেঁকে যাওয়া লোহার অবকাঠামো। এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল মানুষের শরীরের ছিন্নভিন্ন অঙ্গ। সারাদিনই বের করা হচ্ছিল একের পর এক দগ্ধ লাশ। গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে ডিপো থেকে পোড়া মানুষগুলোকে একে একে বের করে আনেন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মফিদুল আলম বলেন, রাসায়নিক মজুদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেয়নি। বিস্ফোরক অধিদপ্তরও বলেছে একই কথা। ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকা- নিয়ন্ত্রণে আনার মতো সক্ষমতা ছিল না বলে স্বীকার করেছে বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ।
বিএম ডিপোর মূল প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক মেজর (অব) শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, ‘কীভাবে আগুন লেগেছে আমরা জানি না। আগুন লাগার কারণ বের করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এত বড় আগুন নেভানোর ব্যবস্থাও আমাদের ছিল না।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, মালিকপক্ষ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ডিপো পরিচালনা করছিল। এ ধরনের ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্য কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন তারা।
বিএম ডিপোতে কীভাবে অগ্নিকাণ্ড ও একের পর এক রাসায়নিকের বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার একটি ধারণাপত্র গতকাল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ওই ডিপোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেখা যায়নি। আগুন লাগার পর দ্রুত কনটেইনারগুলোর দূরত্ব বাড়ানো গেলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমানো যেত। ডিপোতে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সরঞ্জাম রয়েছে। এর পরও কাজ করা যায়নি।
চট্টগ্রাম বন্দরে এখনো হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ভর্তি ২টি কনটেইনার রয়েছে। যেগুলো দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে গতকাল বিকালে শুল্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘এটি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, সেটি খতিয়ে দেখা হবে।’
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ডিপো যারা পরিচালনা করেন, তাদের বিরাট অবহেলা পাওয়া গেছে। বন্দরের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের ৪টি উপজেলা, ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের ১৮৩ জন সদস্য কাজ করছেন। বিস্ফোরণে তাদের ৯ কর্মী মারা গেছেন। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১২ জন।
দুপুরে ঘটনাস্থলে এসে বিএম ডিপোর জেনারেল ম্যানেজার (সেলস ও মার্কেটিং) নাজমুল আকতার খান বলেন, ২৪ একর জমিতে এ ডিপো। কনটেইনার ছিল চার হাজার ৩০০টি। এর মধ্যে তিন হাজার খালি ছিল। আমদানি পণ্য ছিল ৪৫০টি কনটেইনারে, আর ৮০০টি ছিল রপ্তানির। রাসায়নিক পণ্যের কনটেইনার আলাদা রাখা হয়। কত রাসায়নিক কনটেইনার ছিল, তা জানা নেই। আগুন কীভাবে লাগল প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তদন্তের পর বোঝা যাবে, কেন আগুন লাগল। ‘স্যাবোটেজও’ হতে পারে। কী হয়েছে কেবল তদন্ত বলতে পারবে।
এদিকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ঘটনার জোর তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি এসেছে জাতীয় সংসদে বিরোধীদল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে।
জানা গেছে, নিহতদের পরিবারকে ৫০ হাজার ও আহতদের চিকিৎসায় ২০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল রাতে ডিপোর মালিক পক্ষ নিহতের জন্য ১০ লাখ, গুরুতর আহতের জন্য ৬ লাখ এবং কম আহতের জন্য ৪ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড থেকে সূত্রপাত: কনটেইনারে লোড করার সময় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গতকাল প্রাথমিক প্রতিবেদন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিএম কনটেইনার ডিপো ১৬ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এটি বেসরকারি মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড কনটেইনারে লোড করার সময়ে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চট্টগ্রাম বন্দর নিরাপদ ও অক্ষত রয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এ ধরনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এটাই প্রথম। সম্প্রতি লেবাননে বৈরুত বন্দরে ভয়াবনহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর সতর্কতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সমুদ্র ও নদীবন্দরগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক পদার্থ রয়েছে কি না, সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে বন্দরগুলোতে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএ, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের বন্দরগুলোতে উল্লেখযোগ্য বিপজ্জনক পদার্থ নেই বলে জানায়। এর কয়েক মাসের মধ্যে এ ঘটনা ঘটল।
মালিক-কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা: গতকাল দুপুর পর্যন্ত ডিপোর মালিকের পক্ষ থেকে কেউ আসেনি। ফলে কনটেইনার ডিপোতে কী ধরনের কেমিক্যাল রয়েছে, তা জানতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল। ফায়ার সার্ভিস বলছে, মালিকপক্ষ সহযোগিতা না করায় তারা উদ্ধার তৎপরতায় বেকায়দায় পড়েছে। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের ফায়ার স্টেশন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় কুমিল্লা, ফেনী, রাঙামাটি, কক্সবাজারসহ পুরো বিভাগের ফায়ার ইউনিটকে কাজে লাগানো হয়। তবে রাসায়নিকের বিষয়ে আমাদের জানানো হয়নি। একাধিক কনটেইনারে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দেখতে পেয়েছি। কিন্তু কোন কনটেইনারে কী ধরনের রাসায়নিক আছে, সেটি নিশ্চিত না হলে আগুন নেভানো কঠিন। মালিকপক্ষ এ তথ্য দিতে পারতেন; কিন্তু ঘটনার শুরুতে তাদের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
১২ ঘণ্টা ধরে বিস্ফোরণ: বিএম কনটেইনার ডিপোতে শনিবার রাতে আগুন লাগার পর থেমে থেমে টানা ১২ ঘণ্টা বিস্ফোরণ ঘটে। তবে বেলা সাড়ে ১১টার পর বিস্ফোরণের শব্দ আর শোনা যায়নি। তবে রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
অগ্নিনির্বাপণে সেনাবাহিনী: আইএসপিআর জানায়, উদ্ধার অভিযানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৫০ জন সদস্য কাজ করছেন। উদ্ধার অভিযান ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর একটি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৪ জন সদস্যসহ চট্টগ্রাম সিএমএইচে ১৫ জন চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ও নিরাপত্তা দল আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক সামগ্রী সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়া রোধে কাজ করছে। সেনাবাহিনীর ১ ইঞ্জিনিয়ার কোরের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিরা সুলতানা বলেন, সমুদ্রে যাতে রাসায়নিক না যায়, সেটা প্রতিরোধ করাই এখন আমাদের মূল কাজ। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আছেন, তারা সার্ভে করছেন। যে খাল দিয়ে পানি সাগরে যায় সেটি বন্ধ করে দিয়েছেন তারা।
অনুমোদনহীন বিপুল রাসায়নিক: সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’ নামের বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক মজুদ ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাইড্রোজেন পারক্সাইডকে উত্তপ্ত করা হলে বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করে। মজুদ থাকা বিস্ফোরক আগুন ও পানির সংঘর্ষে আশায় প্রচণ্ড গতিতে বিস্ফোরণ ঘটনায়।
ঢাকার বার্ন ইনস্টিটিউটে ১৪ রোগী: অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ ১৪ জনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত সাতজনকে ভর্তি করা হয়েছিল। তারা হলেন সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের রবিন মিয়া ও কুমিরা স্টেশনের গাউসুল আজম। বাকি পাঁচজন হলেন মাসুম মিয়া, ফরমানুল ইসলাম, রুবেল মিয়া, ফারুক হোসেন ও মহিবুল্লাহ। পরে সন্ধ্যায় সাতজনকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। তারা হলেন- আমিন, ফারুক, রাসেল, মাকখারুল ইসলাম, খালেদুর রহমান, এস আই কামরুল ইসলাম ও শেখ মইনুল হক।
ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার করে সাত রোগীকে নিয়ে আসা হয়। প্রত্যেকের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত এখানে আসা ১৪ জনের কেউ আশঙ্কামুক্ত নন। তিনি আরও বলেন, সোমবার সকালে তার নেতৃত্বে একটি দল চট্টগ্রাম যাবে। চট্টগ্রামে আপাতত কোনো লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন হচ্ছে না। তবে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।
বন্ধ ছিল পকেট গেট: সীতাকুণ্ডে ডিপোতে বিস্ফোরণের আগে আগুন লাগার সময়ও ডিপোর পকেট গেট বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছেন বেঁচে ফেরা কয়েক শ্রমিক। তাদের অভিযোগ, ডিপোতে আগুন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বরত শ্রমিকরা ডিপোর দক্ষিণ পাশের পকেট গেট দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাইরে তালা লাগিয়ে গেটের দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী পালিয়ে যাওয়ায় আর কোনো শ্রমিক ভেতর থেকে বের থেকে পারেননি।
চার তদন্ত কমিটি : ঘটনায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস ও ডিপো মালিক কর্তৃপক্ষ চারটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মো. ফখরুল আলম জানান, বিএম কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব কারখানার হাউড্রোজেন পারঅক্সাইড রপ্তানির জন্য ডিপোতে আনা হয়েছিল। তবে রপ্তানি দলিলাদি গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টমসে দাখিল হয়নি।
হতাহতদের স্মরণে গতকাল শোক প্রস্তাব করা হয় জাতীয় সংসদ অধিবেশনে।শোক: হতাহতের ঘটনায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শোক জানিয়েছেন। গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আহত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দেন। শোক জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।