এক হাজার কোটিরও বেশি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বিএম কন্টেনার ডিপোর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং বিস্ফোরণের ঘটনায় । অবশ্য বেসরকারি কন্টেনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডা ১৪শ’ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে। বিপুল পরিমাণ রপ্তানি পণ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন কারখানার আমদানিকৃত বহু কাঁচামালও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন এবং বিস্ফোরণে কন্টেনার ডিপোর ভিতরে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মাঝে পণ্যভর্তি প্রায় ১২শ’ টিইইউএস কন্টেনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিএম কন্টেনার ডিপোতে থাকা পণ্যভর্তি দেড় হাজারেরও বেশি কন্টেনারের ৯৫ শতাংশই ধ্বংস হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো কন্টেনার দুমড়ে মুচড়ে একেবারে শেষ হয়ে গেছে।
সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেনার ডিপো চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রুপ স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। হল্যান্ডের সাথে যৌথ বিনিয়োগে ২০১১ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা পরিচালনা করছে। প্রায় ২৫ একর জায়গার উপর গড়ে তোলা বেসরকারি এই কন্টেনার ডিপোর ধারণক্ষমতা ৭ হাজার টিইইউএস কন্টেনার। এর মধ্যে গতকাল ঘটনার সময় এই ডিপোতে ৪ হাজার ৩শ’ টিইইউএস কন্টেনার ছিল। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার টিইইউএস খালি কন্টেনার, যেগুলোতে পণ্য বোঝাই করা হতো। অপরদিকে ১ হাজার ৩শ’ টিইইউএস কন্টেনার ছিল পণ্য ভর্তি। এর মধ্যে অধিকাংশ প্রায় ৫শ’ কন্টেনার ছিল আমদানি পণ্য বোঝাই এবং প্রায় ৮শ কন্টেনার ছিল রপ্তানি পণ্য বোঝাই।
বিএম কন্টেনার ডিপোর ম্যানেজার নাজমুল আকতার খান বলেছেন, পণ্যভর্তি কন্টেনারগুলোর মধ্যে ৪৫০টিতে আমদানি এবং আটশ কন্টেনারে রপ্তানি পণ্য ছিল। মূলত তৈরি পোশাক ও খাদ্যপণ্যই রপ্তানির জন্য কন্টেনারে বোঝাই করা হয়েছিল। দু’য়েকদিনের মধ্যে কন্টেনারগুলো জাহাজীকরণের প্রোগ্রাম ছিল।
বেসরকারি কন্টেনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার সেক্রেটারি মোহাম্মদ রুহুল আমিন সিকদার বলেছেন, আমদানি রপ্তানি মিলে প্রায় ১২শ’ কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছে। এর বাইরে কন্টেনার ডিপোর অন্তত ২শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে বিজেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, দেশের কমপক্ষে ৭০ জন রপ্তানিকারকের পোশাক ভর্তি কন্টেনার ছিল বিএম ডিপোতে। যেগুলো পুড়ে গেছে। তাছাড়া না পুড়লেও সেগুলো আর রপ্তানি করা যাবে না। এতে করে বিএম কন্টেনার ডিপোতে পুরোপুরি পুড়ে যাওয়া কিংবা আংশিক পোড়া কোনো কন্টেনারই আর বিদেশে পাঠানো সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, আমরা খোঁজখবর নিয়ে যতটুকু জেনেছি তাতে আমাদের বিভিন্ন সদস্য প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যভর্তি ৪০০ কন্টেনার পুড়ে গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ১৫ জন রপ্তানিকারকের পণ্য রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি বলেন, শুধু চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকদের ১৮ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি পণ্য ছিল ডিপোতে।
ঢাকাসহ সারাদেশের রপ্তানিকারকদের মোট কত টাকার পণ্য ছিল, সে তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি বলেও তিনি জানান।
সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডির প্রেক্ষিতে চলতি সপ্তাহে জাহাজীকরণের জন্য নির্ধারিত এসব পণ্যের শিপমেন্ট আর হচ্ছে না। এতে বিদেশি বায়ারদের সাথে আমাদের নতুন করে আলোচনা করতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড এইচএন্ডএমসহ টিভিএইচ, টার্গেটসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য ছিল এসব কন্টেনারে। এ ছাড়া ডিএইচএল’র কিছু পণ্য ছিল। যেগুলো মূলত অনলাইন শপিং প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রয়াদেশের বিপরীতে পাঠানো হচ্ছিল। সবকিছু মিলে দেশের অনেক বড় একটি ক্ষতি হলো বলেও সৈয়দ নজরুল ইসলাম উল্লেখ করেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২৪ বছর আগে শুরু হয় বেসরকারি কন্টেনার ডিপো বা আইসিডি ব্যবসা। দেশের বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদিত রপ্তানি পণ্য ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যানে বোঝাই করে এখানে আনা হয়। পরে এখানে কন্টেনারে বোঝাই করে জাহাজীকরণের মাধ্যমে রপ্তানি করা হয়। দেশের শতভাগ রপ্তানি পণ্য এই প্রক্রিয়ায় জাহাজীকরণ করা হয়। বিএম কন্টেনার ডিপোসহ চট্টগ্রামে ১৬টি বেসরকারি আইসিডি রয়েছে। এসব ডিপোতে শতভাগ রপ্তানি পণ্যের পাশাপাশি ৩৭ ধরনের আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার এনে খালাস করা হয়। এতে করে কন্টেনার ডিপোতে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, কন্টেনার মুভারের আনাগোনা লেগে থাকে। ডিপোর নিজস্ব কর্মীবাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন যানবাহনের চালক সহকারীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীবাহিনী কাজ করেন। বিএম কন্টেনার ডিপোতে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড এবং বিস্ফোরণের সময় অন্তত ৫শ’ মানুষ ভিতরে নানা কাজে ব্যস্ত ছিলেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।