অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে মহামারী করোনার ধাক্কার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ । অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে এ দুই কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এর সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে তাকে। ফলে অন্য বছরের চেয়ে এ বছর অর্থমন্ত্রীকে অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়েই বাজেট প্রণয়ন করতে হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৯ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে। এ জন্য বাজেট তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবছরের মতো এ বছরও বাজেট প্রণয়নে অর্থমন্ত্রী দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বাজেট আলোচনা এবং প্রস্তাবনা নিয়েছেন। তাদের আলোচনা ও প্রস্তাবনা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে অর্থ বিভাগ। অর্থ বিভাগ আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ; তেল, গ্যাস ও সারের মূল্যবৃদ্ধিজনিত বর্ধিত ভর্তুকির জন্য অর্থের সংস্থান; বেসরকারি বিনিয়োগ অব্যাহত রেখে কর্মসৃজন; আমদানি সহনীয় পর্যায়ে রেখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ স্থিতিশীল রাখা; ব্যাংক ঋণের সুদের হার বর্তমান পর্যায়ে রাখা; রাজস্বের পরিমাণ বাড়ানো ও বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনা, কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেওয়া এবং সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছে।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতার এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে নিয়ে দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নয়ন বিশ্বের কাতারে শামিল করার বিষয় তুলে ধরবেন। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে
এটা সামান্য কমানো হতে পারে শেষ মুহূর্তে, যার পর্যালোচনা এখনো চলছে। এবারের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৫ শতাংশে বেঁধে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে এবারের বাজেটে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ বাড়ছে। তবে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ প্রথমবারের মতো ৬ শতাংশ অতিক্রম করতে পারে বলে জানা গেছে। অবশ্য অর্থনীতিবিদরা পরিস্থিতি বিবেচনায় ঘাটতির প্রাক্কলন বাড়ানোর বিষয়েই ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থমন্ত্রী বাজেটে স্বস্তিদায়ক খবর দিতে চান জনগণকে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। এখনো বাড়ছে। ফলে নিত্যপণ্যের বাজারও ঊর্ধ্বমুখী, যা মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে গ্যাস, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, সার কিংবা পানির দাম বাড়ালে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে, যার একটা বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ফলে মানুষকে নতুন করে কোনো কষ্টের মধ্যে ফেলতে চায় না সরকার। এসব বিবেচনায় আপাতত গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানি তেল, সার কিংবা পানির দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজেট ঘোষণার পর পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
জানা গেছে, বাজেটের অঙ্ক যা-ই হোক, বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু হলেও সুখবর দিতে চায় সরকার। জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা। জনগণের কাঁধে নতুন করে করের বোঝা না চাপানো। যদিও বাজেটের ঘাটতি ও ভর্তুকি কমাতে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সব ধরনের জ্বালানি ও পরিসেবার দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। কিন্তু আসছে বাজেটে এমন কিছু উদ্যোগ নিতে চায় সরকার, যার ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় লাগামহীনভাবে বাড়বে না, জিনিসপত্রের দাম নাগালের মধ্যে থাকবে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই বাজেট প্রণয়নের কাজ করছেন অর্থ বিভাগে কর্মকর্তারা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও। এই প্রভাব মোকাবিলা করে কীভাবে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করা যায়, সে বিষয়টি আগামী বাজেটে অধিক গুরুত্ব পাবে।
তিনি বলেন, বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। যে চ্যালেঞ্জিং সময় মোকাবিলা করে যাচ্ছি এ সময়ে আমাদের দেশের মানুষকে যতটা পারি সহায়তা করব। ন্যায়সঙ্গত হবে না এমন কিছু তাদের ওপর চাপিয়ে দেব না।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |