ভারত অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণে গত ১৩ মে গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। ফলে গম নিয়ে মারাত্মক সমস্যায় পড়ে ভারতের এই খাদ্যশস্যের অন্যতম আমদানিকারক বাংলাদেশ। এ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে বাংলাদেশসহ কিছু দেশে গম রপ্তানিতে রাজি হয়েছে দেশটি। গতকাল বৃহস্পতিবার এক রিপোর্টে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোতে অন্তত ৪ লাখ ৬৯ হাজার ২০২ টন গম রপ্তানিতে রাজি হয়েছে। যদিও এর মধ্যে প্রায় দুই লাখ টন রপ্তানির গম ট্রাকভর্তি হয়ে পড়ে আছে দেশটির সীমান্তগুলোয়। এসব গম মূলত যাওয়ার কথা বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, তানজানিয়া এবং মালয়েশিয়ায়। কিন্তু ট্রাকগুলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক অনুমতি না পাওয়ায় সীমান্ত অতিক্রম করতে পারছে না। ফলে চলমান বর্ষা মৌসুমের কারণে এসব গম নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারতের সরকারি কর্মকর্তা ও রপ্তানিকারকরা। একই দিন আরেক প্রতিবেদনে টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থলবন্দরে তিন সপ্তাহ ধরে আটকে রয়েছে গম বোঝাই শতাধিক ট্রাক। এসব ট্রাকে অন্তত ৪ লাখ টন গম রয়েছে। কিন্তু ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ট্রাকগুলোকে বাংলাদেশে প্রবেশের ছাড়পত্র দিচ্ছে না। ফলে বৃষ্টিতে গম নষ্ট হয়ে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করেছেন ভারতীয় রপ্তানিকারকরা।

জানা গেছে, গত ১৩ মে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) গম রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করলেও দেশটির সরকারি নির্দেশনায় জানানো হয়, গত ১৩ তারিখের আগে যেসব ঋণপত্র বা এলসি ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলো যথাসময়ে রপ্তানি করা হবে। এর পরও ১৩ মের আগে চালান সম্পন্ন হওয়া বা অর্থ পরিশোধ করা গম বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ওয়েস্ট বেঙ্গল এক্সপোর্টার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির (ডব্লিউবিইসিসি) সাধারণ সম্পাদক উজ্জল সাহা বলছেন, মালদহ জেলার মাহাদিপুর স্থলবন্দরে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন গম আটকে আছে। এসব গমের জন্য আমরা গত ১৩ মের আগে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের কাছ থেকে অর্থ পেয়েছি। এই চালান বহনকারী ট্রাকগুলোকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কোনো কারণ নেই।

পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরেও একই অবস্থা। চ্যাংড়াবান্ধা রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি বিমল কুমার ঘোষ জানান, গত ১২ মে থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায় দেড় হাজার গম বোঝাই ট্রাক আটকে আছে। মালদহভিত্তিক একজন রপ্তানিকারক বলছেন, গত ১৩ মে থেকে প্রায় চার লাখ টন গম পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অংশে আটকে আছে। বাংলাদেশ আমাদের প্রধান ক্রেতাদের মধ্যে অন্যতম। কারণ বাংলাদেশি আমদানিকারকরা অন্যান্য দেশ থেকে কেনার পরিবর্তে ভারতীয় গম কিনে প্রায় ৩০ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় করে। গত অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে প্রায় ৪০ লাখ টন শস্য রপ্তানি করেছে।

এ বিষয়ে ভারতের একজন কাস্টমস কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ডিজিএফটি থেকে একটি নির্দেশনা দরকার। তা না হলে বাংলাদেশে ট্রাক ঢুকতে দেওয়া যাবে না। টেলিগ্রাফ বলছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ২৮ মে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়ালকে চিঠি দেয় ডব্লিউবিইসিসি।বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দিতে ডিজিএফটিকে একটি আদেশ জারির ক্ষমতা প্রদানের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে গম বোঝাই ট্রাকগুলোকে ।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031