পুলিশের সাবেক ওসি-এসআই পরিচয়ে দিতেন সরকারি চাকরির প্রলোভন। টার্গেট তাদের শিক্ষিত বেকার যুবক। ‘চাকরি পাওয়ার পরে টাকা’- সেই চুক্তিতেই চাকরিপ্রার্থীকে প্রথমে কাছে টানা হয়। এর পর কৌশলে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা। এভাবে প্রায় পাঁচ বছর ধরে চক্রটি ৫০ চাকরিপ্রার্থী ও অভিভাবকের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়েছে। এরই মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তারা হলেন- প্রতারণা ও জালিয়াতচক্রের মূলহোতা মো. হেলালউদ্দিন এবং তার সহযোগী মফিজুল ইসলাম ওরফে লেবু, খন্দকার মারুফ ও মো. আব্দুল কাদের ওরফে রাজু।

রাজধানীর মিরপুর ও মতিঝিল এলাকায় গত মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে জালিয়াতচক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের সময় বিভিন্ন সংস্থার ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ সিল, ১১ পাতা ভুয়া নিয়োগপত্র, তিন পাতা নিয়োগসংক্রান্ত চুক্তিপত্র, আটটি মোবাইল ফোন ও নগদ সাড়ে ২১ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন র‌্যাব ৩-এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

র‌্যাব ৩-এর অধিনায়ক জানান, প্রতারকচক্রের সদস্যরা সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা করে আসছে- এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার রাতে মিরপুর ও মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৩। পরে জিজ্ঞাসাবাদে হেলালউদ্দিন জানান, প্রতারণা ও জালিয়াতচক্রের মূলহোতা তিনি। নিজেকে মোহাম্মদপুর থানার সাবেক ওসি, এসআই পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের কথার জালে ফাঁসিয়ে চাকরির প্রলোভনে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। ভাড়া করা গাড়ি নিজের বলে দু-একজন চাকরিপ্রার্থীকে তাতে চড়িয়ে সরকারি বিভিন্ন অফিসের সামনে গিয়ে নামতেন। এর পর অফিসের ভেতরে গিয়ে কিছুক্ষণ পর বের হয়ে আসতেন। এভাবে চাকরিপ্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের আস্থা অর্জন করতেন প্রতারক হেলালউদ্দিন। চাকরিপ্রার্থীদের আর্থিক অবস্থাভেদে তিনি ৫-৯ লাখ টাকা পর্যন্ত নিতেন। জালিয়াতচক্রের প্রধান হিসেবে তিনি প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়েছেন, যার ভাগ অন্য সদস্যদেরও দিয়েছেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, মফিজুল ইসলাম লেবু ও আব্দুল কাদের রাজু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে লালমনিরহাট, বগুড়া, কুমিল্লা থেকে চাকরিপ্রার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের মূলহোতা হেলালের কাছে নিয়ে আসতেন। হেলাল ‘বস’ সেজে চাকরিপ্রার্থীদের ইন্টারভিউ নিতেন। পরে ভাড়া করা গাড়িতে সরকারি বিভিন্ন অফিসে যেতেন। প্রার্থীদের গাড়িতে বসিয়ে রেখে নিজে নেমে অফিসে ঢুকতেন। দীর্ঘ সময় পর বের হতেন। এভাবে প্রার্থীদের আস্থা অর্জন করতেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার খন্দকার মারুফ মূলত চক্রের মূলহোতা হেলালউদ্দিনের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতা, সরকারি কর্মকর্তা এবং একটি বিশেষ অঞ্চলের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে নিজেকে চাকরিপ্রার্থীদের কাছে জাহির করতেন মারুফ। বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সিল ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভুয়া সইসংবলিত অফিস আদেশ এবং ভুয়া নিয়োগপত্র খামে করে ভুক্তভোগীদের হাতে ধরিয়ে দিতেন। ভুক্তভোগীদের সামনে সঠিকভাবে উপস্থাপন ও বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য মেডিক্যাল টেস্টের নামে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও তাদের নিয়ে যাওয়া হতো। প্রথমে তারা প্রতিশ্রুতি দিতেন- চাকরি হওয়ার পর টাকা নেওয়া হবে। তবে বিভিন্ন অজুহাতে চাকরিপ্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে ভুয়া নিয়োগ দেওয়ার আগের রাতে তারা বলতেন, আরও টাকা দিতে হবে। না হলে আগামীকাল চাকরি কনফার্ম করা যাবে না। ভুক্তভোগীরা সরকারি চাকরি পাওয়ার আশায় তাদের চাহিদামতো অগ্রিম টাকা দিতেন।

র‌্যাব ৩-এর অধিনায়ক আরও জানান, চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার যুবকদের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে চাকরির প্রলোভনে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। যদিও তারা এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীকে চাকরি দিতে পারেনি। গ্রেপ্তাদের প্রত্যেকেই আর্থিক লাভের আশায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন বলে স্বীকারও করেছেন জানিয়ে আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, ‘হেলালউদ্দিন বগুড়ার একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেছেন। খন্দকার মারুফ এইচএসসি পাস। মফিজুল ইসলাম ওরফে লেবু এসএসসি পাস। তিনি কুড়িগ্রামের অলিপুর থানার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য। আব্দুল কাদের ওরফে রাজু একটি বেসরকারি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা পাস করেছেন।’ র‌্যাবের কর্মকর্তা জানান এ চক্রের অন্য সদস্যদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে   ।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031