চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের অবরোধে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় কার্যত অচল ছিল । অবরোধের কারণে গতকাল বুধবার সকাল থেকে শাটল ট্রেন ও শিক্ষক বাস চলাচল বন্ধ ছিল। শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা না আসায় ক্লাস এবং পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয় প্রশাসন। অবরোধে ব্যাহত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজ। জানা গেছে, স্থানীয় যুবলীগ নেতা মো. হানিফের নেতৃত্বে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের অভিযোগে এই অবরোধ করে চবি শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স)। প্রায় ১২ ঘণ্টা অবরোধ শেষে দুপুর ৩টার দিকে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের শর্তে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ স্থগিত করে ছাত্রলীগ। অবরোধ স্থগিতের পর ক্যাম্পাস থেকে ৪টার ট্রেন ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়েনি। ক্যাম্পাস থেকে সাড়ে ৫টার ট্রেন ছাড়ে ৬টা ১০ মিনিটে। জানা যায়, মঙ্গলবার রাত প্রায় ৩টার সময় ক্যাম্পাসে ফেরার পথে রেলক্রসিং এলাকায় আক্রমণের শিকার হয় শাখা ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক উপগ্রুপ ভিএক্সের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়। ৭–৮ জন লোক তাকে আক্রমণ করে এবং অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ আনেন তিনি। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার ভোররাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক আটকিয়ে, রাস্তার গাছ ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। সবগুলো রাস্তা বন্ধ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এমনকি ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরেও বিভিন্ন স্পটে গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখাসহ আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে নেতাকর্মীরা। ঘটনার বিষয় জানার সুযোগ না থাকায় অনেকেই দূর–দূরান্ত থেকে ক্যাম্পাসে এসে ফিরে যান। আইন বিভাগের মাস্টার্স, পালি বিভাগ এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া অনেক বিভাগের টিউটোরিয়াল, ল্যাব ও গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। সব মিলিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
হামলার শিকার ছাত্রলীগ নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, রাত ৩টার দিকে মোটরসাইকেলে ক্যাম্পাসে ফিরছিলাম। আমার পেছনে বসা ছিল রাশেদ হাসান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী জোবরা ফতেহপুর গ্রামের মদন শাহ মাজারের সামনে গতিরোধক থাকায় গতি কমিয়ে দিই। এ সময় হঠাৎ বাম পাশ থেকে কে যেন আমাকে পাইপ দিয়ে আঘাত করে। মাথা সরিয়ে নিলে চোখে আঘাত লাগে। পরে আমাদের দুই জনকেই মারধর করে স্থানীয় যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফ, তার ভাই ইকবাল, জালাল ও অন্যরা।
আক্রমণের কারণ জানতে চাইলে দুর্জয় বলেন, ইভ টিজিং করার সময় বাধা দেওয়ায় হানিফের ছোট ভাই আমাদের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর করে। পরে আরেক ছাত্রলীগ কর্মীকেও মারধর করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে মামলা করে। তখন থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে ভীতি প্রদর্শন করছিলেন হানিফ। আন্দোলনের ব্যাপারে দুর্জয় বলেন, প্রশাসনের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেছি। তবে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সকল অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে আমরা আবার আন্দোলনে যাব।
এদিকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত স্থানীয় যুবলীগ নেতা মো. হানিফকে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় আটক করে হাটহাজারী থানা পুলিশ। এ ব্যাপারে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে মো. হানিফ নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
জানা যায়, মো. হানিফের বিরুদ্ধে আগেও গাছ পাচার ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন টেন্ডার ও স্বার্থমূলক বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব। তবে আক্রমণের বিষয়টি অস্বীকার করে হানিফের ছোট ভাই মো. ইকবাল আজাদীকে বলেন, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই ঘটনায় আমি এবং আমার বড় ভাই জড়িত না। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। হানিফকে থানায় আটকের ব্যাপারে ইকবাল বলেন, থানায় আমার ভাইকে ডেকেছে। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে গিয়েছেন। তিনি তো অপরাধী না যে পালিয়ে থাকবেন।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান বলেন, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় স্থিতিশীল থাকুক। এখন হঠাৎ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে গেলে তো তাৎক্ষণিক কিছু করার থাকে না। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়েছে সেটা জানি। আমরা সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। শাটল ট্রেনের ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া গতকাল রাতে আজাদীকে বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা আইন–শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছি। তারা তাদের ব্যবস্থা নিয়েছে। আর ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে আমরা অবরোধ প্রত্যাহার করার জন্য বলেছি। তারা অবরোধ স্থগিত করেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। বিকেল থেকে ট্রেনও চলেছে। আগামীকাল (আজ) সব ঠিকঠাক মত চলবে।আর যাদের পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে পরবর্তীতে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। শুক্রবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি রয়েছে আমাদের ক্যাম্পাসে। সেটিও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে।