ঢাকা : ব্যাঙের বিয়ে! তা-ও মহা ধুমধাম করে। বিয়ের জন্য ছায়ামণ্ডপ, পুষ্পমাল্য, গায়েহলুদ, আশীর্বাদ, ধান-দূর্বা, ভোজন—সব ধরনের ব্যবস্থাই ছিল। শুধু তা–ই নয়, বিয়েতে নিমন্ত্রিত ব্যক্তিরাও ব্যাঙ দম্পতিকে দিয়েছেন অর্থসহ বিভিন্ন ধরনের উপহারসামগ্রী।আজ শনিবার দুপুরে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ৬ নম্বর ভান্ডারা ইউনিয়নের ভারাডাঙ্গী বেতুরা পশ্চিমপাড়া গ্রামে এই ব্যাঙের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, যে বছর তাঁদের এলাকা অনাবৃষ্টির কবলে পড়ে, সেই বছরই তাঁরা বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের এই ধরনের বিয়ের আয়োজন করে থাকেন। স্থানীয়ভাবে এটিকে ‘ব্যাঙ্গা-ব্যাঙ্গির বিয়ে’ বলা হয়। এক শ বছরেরও বেশি সময় ধরে বংশপরম্পরায় তাঁরা এই রীতি পালন করে আসছেন বলে দাবি করলেন তাঁরা। তাঁদের বিশ্বাস, ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হয়।আজ দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ জড়ো হয়ে দুটি ব্যাঙকে বিয়ে দিতে গায়েহলুদের আয়োজন করেছে। পাশেই চলছে খাওয়াদাওয়ার জন্য রান্নার আয়োজন। বিয়ের অনুষ্ঠান ঘিরে ঢাকঢোলের বাজনার সঙ্গে চলছে কিশোর-তরুণদের দল বেঁধে নাচ।
গৃহবধূ শেফালি রানি রায় (৬০) প্রথম আলোকে বললেন, ব্যাঙের বিয়ে উপলক্ষে গ্রামবাসী বর ও কনে দুই পক্ষে বিভক্ত হয়েছে। তিনি নিজে সেজেছেন বরের মা। আরেক গৃহবধূ ডালো রানি রায় (৪০) হয়েছেন কনের মা। উভয় পক্ষ নিজ নিজ পক্ষে গায়েহলুদের আয়োজন করেন। বর ও কনে পক্ষের অতিথিরা একে অন্যের আয়োজনে অংশ নেয়। এরপর শুরু হয় মূল বিয়ের কার্যক্রম।সেখানে দেখা যায়, বড় বড় দুটি সোনা ব্যাঙকে গোসল করানোর পর বসানো হয় বিয়ের পিঁড়িতে। মালাবদলসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় সম্পন্ন হয় বিয়ের পর্ব। বিয়ে শেষে বর-কনেকে বসানো হয় আরেকটি স্থানে। সেখানে বরপক্ষ ও কনেপক্ষ উভয়েই ধান-দূর্বা দিয়ে শুভকামনা জানায় এদের। অনেকেই এদের অর্থসহ বিভিন্ন উপহার দেন।এলাকার অশীতিপর বৃদ্ধা তেনিয়া বর্মণের ভাষ্য, তাঁর জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই এই ধরনের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা তিনি দেখে আসছেন। তাঁর বাবা যখন বেঁচে ছিলেন, তিনিও তাঁকে বলতে পারেননি কবে, কখন বা কত সাল থেকে গ্রামে ব্যাঙের বিয়ের প্রচলন হয়েছে। বংশপরম্পরায় এটা চলছে।