ইউরোপের জাহাজ চলাচল বেড়েছে চট্টগ্রামের সাথে । চট্টগ্রাম ইতালি রুটে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার জের ধরে ক্রমে নেদারল্যান্ডস এবং ইংল্যান্ডের সাথে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। এরই জের ধরে এবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে স্পেনের বার্সেলোনা বন্দরে সরাসরি কন্টেনার জাহাজ সার্ভিস চালু হয়েছে। ক্রমে ইউরোপের অন্যান্য দেশের বন্দরের সাথেও চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ চলাচল বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিশ্বব্যাপী চট্টগ্রাম বন্দরের ইমেজ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যেসব দেশের জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের নাম শুনলে পিছিয়ে যেতো এখন তারা এই রুটে বেশ আগ্রহ নিয়ে পণ্য পরিবহন করতে শুরু করেছে। এই ধারা ধরে রাখা গেলে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যাপক গতিশীলতা তৈরি হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ইউরোপের সাথে চট্টগ্রামের প্রথম সরাসরি কন্টেনার জাহাজ সার্ভিস চালু করা হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি। চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে দুটি কন্টেনার জাহাজ দিয়ে নতুন এই রুটে পণ্য পরিবহনের কার্যক্রম চলছে। ইতালির ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠান রিফ লাইন ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্যালিপসো কোম্পানিয়া ডি নেভিগেশন সার্ভিসটি পরিচালনা করছে। এই রুটের জাহাজ দুইটি ইউরোপ থেকে খালি কন্টেনার নিয়ে আসে এবং ফিরতি পথে রপ্তানিপণ্য (তৈরি পোশাক) নিয়ে যাত্রা করে।
চট্টগ্রাম ইতালি রুটের ধারাবাহিকতায় গত ২০ মে থেকে শুরু হয় ইউরোপের সাথে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় রুট। চট্টগ্রাম-রটারড্যাম-লিভারপুল রুটে পণ্য পরিবহন চালু করেছে লন্ডনভিত্তিক ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠান ‘অলসীস গ্লোবাল লজিস্টিকস’। তৃতীয় রুট হিসেবে চালু হয়েছে চট্টগ্রাম-বার্সেলোনা রুট। এই রুটে প্রতি ১৫দিন অন্তর একটি জাহাজ চলাচল করবে। ‘এমভি স্পিকা’, ‘এমভি এন্ড্রোমেডা জে’ এবং ‘এমভি মিউজিক’ নামের তিনটি জাহাজ দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে স্পেনে পণ্য পরিবহন করা হবে। রিলায়েন্স শিপিং এন্ড লজিস্টিকস জাহাজ তিনটির বাংলাদেশের স্থানীয় শিপিং এজেন্ট।
রিলায়েন্স শিপিং এন্ড লজিস্টিকসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, চট্টগ্রাম ইউরোপের সাথে আমরাই প্রথম জাহাজ চলাচল শুরু করেছি। ইতালির সাথে আমরা জাহাজ চলাচলের বিয়ষটি দেখভাল করি। এখন অনেকেই আসছেন। চট্টগ্রাম স্পেন রুটে জাহাজ চলাচল রপ্তানি বাণিজ্যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, স্পেন থেকে আসা একটি জাহাজ গত ২৫ মে বন্দরে ভিড়েছে। আজ জাহাজটি ৭শ’ টিইইউএস পণ্য বোঝাই কন্টেনার নিয়ে স্পেনের পথ ধরবে।
অপর একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বেশির ভাগই রপ্তানি হয় ইউরোপে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কলম্বো বন্দর হয়ে এসব পণ্য ইউরোপে পৌঁছে। কিন্তু ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টগুলোর নানা সমস্যা তৈরি পোশাকের চালান সময়মতো ক্রেতাদের হাতে পৌঁছানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠে। এই অবস্থায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বড় বড় বায়ার প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি জাহাজ চলাচলের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর সুফল রপ্তানি বাণিজ্যে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, ইউরোপ আমেরিকার কাছে এখন চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে কোন আশঙ্কা নেই। বিশ্বমানের একটি বন্দর হিসেবে চট্টগ্রামের ইমেজ অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় ভালো অবস্থানে রয়েছে। এতে করে ইউরোপের জাহাজ মালিকেরা অনায়াসে চট্টগ্রামে জাহাজ পাঠাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এই ধারা আরো বেগবান হবে বলে উল্লেখ করে তারা বলেন, চট্টগ্রাম ইউরোপে জাহাজ চলাচল যত বাড়বে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য তত বেশি গতিশীল হবে।
বিজিএমইএর প্রথম সহ সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ইউরোপের সাথে জাহাজ চলাচল বৃদ্ধি আমাদের বেশ আশাবাদী করে তুলছে। তিনি বলেন, দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮২ শতাংশ তৈরি পোশাক। এর ৫১ শতাংশ হয় ইউরোপের সাথে। এতে করে ইউরোপের সাথে বাংলাদেশের জাহাজ চলাচলের অনেক বড় বাজার এবং সম্ভাবনা রয়েছে। দেশ উপকৃত হবে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো গেলে ।