যাত্রীরা ঈদযাত্রায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বগুড়া অংশে দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন। গত মার্চে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও বগুড়া অংশের কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪৫ ভাগ। এ ছাড়া মহাসড়কের মাঝখানে চলছে ওভারব্রিজ নির্মাণের কাজ। ফলে ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যানজট ও দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন উত্তরাঞ্চলের যাত্রী ও চালকরা।
অন্যদিকে ঈদ ঘনিয়ে আসায় উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে অতিরিক্ত চাপে মহাসড়কের অন্তত চারটি পয়েন্টে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। রাতের বেলায় পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বাড়ায় এ চাপ আরও বৃদ্ধি পায়। যার প্রভাবে সকাল পর্যন্ত মহাসড়কের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে যান চলাচলে ধীরগতি সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ঈদ সামনে রেখে ভিড় বাড়ছে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে। কিন্তু এখনো এ রুটে বাড়ানো হয়নি লঞ্চ। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন এ রুটের যাত্রীরা। লঞ্চ-সিট্রাকের অভাবে বাধ্য হয়েই যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে যাতায়াত করছেন। বিপজ্জনক এ রুটে উত্তাল মেঘনায় ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা।
বর্তমানে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে মহাস্থান এলাকায় খানাখন্দে ভরা। একই অবস্থা মহাসড়কের বগুড়া অংশের প্রায় ৪৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে।
ঢাকায় বঙ্গবন্ধু কৃষি ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থী আবু রাসেল বলেন, আমি গাজীপুর থেকে দুপুর ১২টায় রওনা দিয়ে বিকাল সাড়ে ৪টায় বগুড়ায় এলাম। ঢাকা থেকে বগুড়ায় আসার এতটা জ্যাম ছিল না। কিন্তু বগুড়া থেকে ঢাকা যাওয়ার রাস্তাটা পুরোটাই ব্লক ছিল।
বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর ইসলাম বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, আটোটেম্পো, নসিমন, করিমন মহাসড়কে চলাচল করলে এগুলো দুর্ঘটনা এবং যানজটের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
বগুড়া হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মুনশী শাহাবুদ্দীন বলেন, ঈদযাত্রায় আমাদের ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টটা সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। রাস্তায় নির্মাণ কাজ চলছে। তাই হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সরু রাস্তা, সরু সেতুতে আমরা স্পেশাল টেক-কেয়ার করব।
পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দীন আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে গত বছরের তুলনায় এবার গাড়ির সংখ্যা বাড়বে। ৬০ থেকে ৭০ হাজার গাড়ি প্রতিদিন বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে আসতে পারে। ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যানজটসহ জনদুর্ভোগ কমাতে রাস্তায় কোনো গাড়ি নষ্ট হলে তা অপসারণ করার জন্য আমরা পর্যাপ্ত মেকার, রেকার ও চেনপুলির ব্যবস্থা করেছি।
সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তরের ১৬ ও দক্ষিণের ৬ জেলায় চলাচলকারী যানবাহনের সেতু গোলচত্বর থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার মহাসড়ক ব্যবহারের বিকল্প নেই। প্রতিবছরই ঈদ মৌসুমে এ মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ সৃষ্টি হওয়ায় যানজটে নাকাল হতে হয় যাত্রীদের। এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদের সময় এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজারে। মহাসড়কে ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কে প্রায় ৪৫০ জন পুলিশ মোতায়েন থাকবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১৫০ জন করে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে ভোলা হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের সহজ মাধ্যম নৌপথ। তাই ওই সব অঞ্চলের যাত্রীদের ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুট ব্যবহার করতে হয়। এ রুটটি ডেঞ্জার জোনের আওতায় থাকায় শুধু সিট্রাক ও সিসার্ভে সনদধারী লঞ্চ চলাচলের অনুমতি রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ বাড়লেও এ রুটে এখনো বাড়ানো হয়নি কোনো লঞ্চ। বর্তমানে এ রুটে দুটি সিট্রাক ও একটি লঞ্চ চলাচল করলেও ঈদের সময় যাত্রী চাপ সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই বাধ্য হয়েই ছোট ছোট ট্রলারে নদী পারাপার হবেন যাত্রীরা।
অবৈধ ট্রলারে যাত্রী পারপার বন্ধে অভিযান চলছে জানিয়েছেন ইলিশা নৌপুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, লঞ্চ সংকট থাকায় যাত্রীরা বাধ্য হয়ে ট্রলারে পারাপার হন। আমরা নিয়মিত অভিযান করছি।
ভোলা নৌবন্দরের বিআইডব্লিটিএ সহকারী পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদ উপলক্ষে খুব শিগগিরই আরও তিনটি লঞ্চ দেওয়া হবে। তখন আর মানুষের এমন ভোগান্তি থাকবে না।