ঢাকা : নভেম্বরে যখন সিরিয়ার সীমান্তের কাছে তুর্কি বাহিনী একটি রাশিয়ান জেটকে ভূপাতিত করেছিল, তখন থেকেই তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান রাশিয়ার প্রধান শত্রুতে পরিণত হয়েছিলেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম নিয়মিত কঠোর সমালোচনা করছিল ইসলামপন্থি নেতা এরদোগানের। রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ওই বিমান ভূপাতিত করার ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসীদের সহযোগী কর্তৃক পিঠে ছুরিকাঘাত’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তুর্কি পণ্যের ওপর আরোপ করা হয়েছিল বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা, চার্টার ফ্লাইট নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এতে রাশিয়া থেকে তুরস্কে ভ্রমণকারী পর্যটকের সংখ্যা বিপুল পরিমাণে কমে যায়। ২০১৫ সালে যেখানে রাশিয়া থেকে তুরস্কে যাওয়া পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৩৬ লাখ, সেখানে এ বছরের প্রথমার্ধে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ১ লাখ ৮৪ হাজার।
এই চিত্রও বদলে গিয়েছে। ৯ই আগস্ট দু’দেশের দুই কর্তৃত্বপরায়ণ নেতা সেন্ট পিটার্সবার্গে এক অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাতের সময় দুজনের ছবি অঙ্কিত দুটি পোর্সিলিন ডিনার প্লেটও ছিল। দুজনের এমন সাক্ষাতের শুরুটা অবশ্য আরো আগে। জুন মাসে এরদোগান আনুষ্ঠানিকভাবে এক চিঠিতে পুতিনের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন নভেম্বরের বিমান ভূপাতিত করার ঘটনার জন্য। রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরেই এমন আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রত্যাশা করে আসছিল। রাশিয়ার পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা সংস্থা কাউন্সিল অন ফরেইন অ্যান্ড ডিফেন্স পলিসির ফিয়োদর লুকিয়ানভ বলেন, ‘ওই অধ্যায় এবার শুরু হলো।’
৯ই আগস্ট পুতিন ও এরদোগানের বৈঠক থেকে দু’দেশের মধ্যে থমকে যাওয়া অর্থনৈতিক বন্ধন পুনরুদ্ধার ও সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এই সম্পর্ককে ‘আগের চাইতেও ভালো’ করে তোলার কথা বলেন। তুরস্কের প্রাকৃতিক গ্যাসের পাইপলাইন প্রকল্প ও রাশিয়ার নির্মিত তুরস্কের প্রথম পারমাণবিক প্ল্যান্টের প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু হতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ট্যুর অপারেটররা বলছেন, চার্টার ফ্লাইট শুরু হবে শিগগিরই। রাশিয়ার অর্থনৈতিকবিষয়ক মন্ত্রী আলেকসেই উলিউকায়েভ ঘোষণা দিয়েছেন, এ বছরের শেষের দিকেই তুরস্কের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে পারে।
অন্য রাজনীতিকরা আশঙ্কা করছেন, এরদোগান ও পুতিনের এই বৈঠক এটাই নির্দেশ করে, যে তুরস্ক পশ্চিমা বিশ্বের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এই আশঙ্কার অন্যতম মূলে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভ্যানিয়ায় স্বেচ্ছানির্বাসিত তুরস্কের মুসলিম নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকে নিয়ে তুরস্ক ও আমেরিকার মধ্যকার দ্বন্দ্ব। গুলেনকে এরদোগান ১৫ই জুলাইয়ের অভ্যুত্থান চেষ্টার মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত করে আসছেন। আঙ্কারার দাবি, গুলেনকে তুরস্কে ফেরত পাঠাতে হবে। এখন পর্যন্ত আমেরিকা এমন দাবি মানবে না বলে আসছে। তাদের যুক্তি, কোনো রাজনৈতিক নেতা নয়, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে আদালত। তুরস্কের সরকারপন্থি সংবাদপত্রগুলোতে এখন পূর্ণোদ্যমে ওই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় আমেরিকার সংশ্লিষ্টতাবিষয়ক ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব ছাপা হচ্ছে।
তারপরও রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল জোটবদ্ধতা সম্ভব বলে মনে হয় না। এর মূলে রয়েছে সিরিয়া। নভেম্বরে রাশিয়ান ওই বিমান ভূপাতিত হওয়ার আরো অনেক আগ থেকেই দু’দেশের মধ্যে চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের পক্ষে রাশিয়া যখন সিরিয়ায় নাক গলিয়েছে, তখন থেকেই দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে। রাশিয়া এখন দেখতে চাইবে, তুরস্ক সিরিয়ার বিদ্রোহীদের ওপর থেকে সমর্থন কমাবে। ফিয়োদর লুকিয়ানভ বলছেন, বিশেষ করে আলেপ্পোতে যখন লড়াই তুঙ্গে, তখন এটা রাশিয়া আরো বেশি করে চাইবে। কিন্তু কোনো পক্ষই নিজ নিজ আনুগত্যের পরিবর্তন খুব দ্রুতই হবে, এমনটি আশা করছে না। আর ওই সাক্ষাতের দিন পুতিন সংসদে নতুন একটি বিলও পাঠিয়েছেন। বিলে তুর্কি সীমান্তের দক্ষিণে সিরিয়ার উপকূলবর্তী লাটাকিয়াতে রাশিয়ার বিমানবাহিনীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |