বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি একত্রিত হয়েছিল ইউনিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও গুলশান জগার্স ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা মোহা. নূর আলী বলেছেন। তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল বলেই আমরা পেয়েছি স্বাধীন দেশ, পেয়েছি স্বাধীন পতাকা। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আমি এবং আমরা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তখন নিজের জীবনের কথা ভাবিনি। বাবা-মা, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন কারও কথা চিন্তা করিনি। একটাই চিন্তা ছিল দেশকে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করা। একজন সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে সব সময় যুদ্ধের মাঠে থাকতে হয়েছে। দিনের পর দিন না খেয়ে, অর্ধাহারে যুদ্ধ করতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমি তো মরে গিয়েছি সেই কবেই। রাজধানীর গুলশান জগার্স সোসাইটি প্রাঙ্গণে গতকাল গুলশান জগার্স সোসাইটি আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২২-এর আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মোহা. নূর আলী।
গুলশান জগার্স সোসাইটি প্রাঙ্গণে গতকাল গুলশান জগার্স সোসাইটির স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করছেন সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. নূর আলী। এ সময় সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন -আল আমিন লিয়ন
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজউকের চেয়ারম্যান আমিন উল্লাহ নুরী। তিনি বলেন, আমি প্রথমেই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি সব মুক্তিযোদ্ধাকে। এই মার্চ মাস বাঙালি জাতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এই মাসেই বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এর আগে আমরা বাংলাদেশি ছিলাম না, আমরা ছিলাম বাঙালি। বঙ্গবন্ধু আমাদের বাংলাদেশ দিয়েছে। এ জন্যই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন গুলশান জগার্স সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য দেন সাবেক সচিব ড. মো. শওকত হোসেন।
মোহা. নূর আলী বলেন, আমরা ১৯৬৯, ১৯৭০ এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলো পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত ঠিকমতো কোনোদিন ঘুমাতে পারিনি। আমি তখন চুরাইন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র এবং ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। আমাকে যে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল তখন থেকে একাত্তরের যুদ্ধের সেই আত্মসমর্পণ পর্যন্ত আমার প্রতিদিনই কোনো না কোনো এজেন্ডা ছিল।
জিয়াউর রহমানের ঘোষণা প্রসঙ্গে নূর আলী বলেন, অনেকেই জিয়াউর রহমানের ঘোষণা নিয়ে ডিবেট সৃষ্টি করে। আমি বলব এরা হয় অতিরিক্ত বুদ্ধিমান কিংবা অতিরিক্ত বোকা। একজন মা যখন সন্তান প্রসব করে তার জন্য নয় মাস সময় লাগে। সুতরাং একটি জাতির স্বাধীনতা শুধু একটা ঘোষণার মধ্য দিয়ে আসতে পারে না। আমাদের এই স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট ’৪৮ থেকে ’৭১ পর্যন্ত একটা ধারাবাহিক রাজনৈতিক ডেভেলপমেন্ট এবং পরিকল্পনা ছিল এবং তার একটা অ্যাকশন ছিল। তারই পরিসমাপ্তি ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধু বিভিন্নভাবে ১৯৬৯ থেকে স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে- বিশেষ করে পরোক্ষভাবে গড়ে তোলেন। আমরা ১৯৬৯ প্রেক্ষাপটে যখন স্লোগান দিতাম ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। এটাই ছিল মূল স্লোগান। কীভাবে স্বাধীনতাটাকে আস্তে আস্তে, ধাপে ধাপে বীর বাঙালি সমবেত করল।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে মোহা. নূর আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটা হলো তার শব্দ চয়ন, তিনি যে শব্দগুলো বলেছেন, ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমাদের যা কিছু আছে তাই দিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর এ কথার পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার আর কিছুই বাকি থাকে না। বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত কৌশলে সমগ্র বাঙালি জাতির আবেগের কথাটি প্রকাশ করে ফেলেন। তিনি আরও বলেন, এই ভাষণে একশ নম্বরের মধ্যে এই শব্দগুলোর জন্য দেওয়া হয়েছে সাত নম্বর। তার যে কণ্ঠস্বর, তিনি যে কণ্ঠে বক্তব্য দিয়েছেন, তিনি কখনো হাত পেছনে রেখেছেন কখনো সামনে রেখেছেন। এই কণ্ঠস্বরের জন্য পঁয়ত্রিশ নম্বর দিয়েছেন। তিন, তার যে তর্জনী হেলনি তার যে নির্দেশ, তার যে অঙ্গভঙ্গি, তার জন্য নম্বর দেওয়া হয়েছে ৫৮। সুতরাং তিনি যে কথাগুলো বলেছেন তা অনেকেই বলতেন। যেমন চার নেতা ও ছাত্র নেতারাসহ অনেকেই বলতেন। কারও কথায় কিন্তু সাড়ে সাত কোটি বাঙালি একত্রিত হয়নি। শুধুই বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে এই সাড়ে সাত কোটি বাঙালি একত্রিত হয়েছে। তাকে বিশ্বাস করেছে। পাকিস্তানিরা দেখল দেশ তো শেখ মুজিবের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। তাই নিয়ন্ত্রণ ছাড়া করতেই এই আক্রমণ। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক’। বাঙালি তাই করেছে।
মোহা. নূর আলী বলেন, দেশে এখনো শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য রয়েছে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এর অবসান চাই। এ দেশে পাঁচ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। স্বাধীন দেশে এভাবে চলতে পারে না। কেউ আরবি ও বাংলায় লেখাপড়া করে, আবার কেউ বাংলা ও ইংরেজিতে লেখাপড়া করে। এই বৈষম্য আমাদের ভাগ করে দিচ্ছে, বিভাজন সৃষ্টি করছে। এর অবসান প্রয়োজন। আমি এর অবসান চাই।
এর আগে সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন গুলশান জগার্স ক্লাবের উপদেষ্টা মোহা. নূর আলী এবং জগার্সের পতাকা উত্তোলন করেন গুলশান জগার্স সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
এর পর পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন গুলশান সোসাইটির জামে মসজিদের ইমাম মৌলানা কামরুল ইসলাম।
এর পর দেশাত্মবোধক গানের পরিবেশনা নিয়ে আসেন মৌটুসী, অভিজিৎ, লিপি, মৃদুলা, অসীম ও নুশরাত নাজ। কবিতা আবৃত্তি করেন প্রকৌশলী অসীম কুমার জোয়ারদার। সবশেষে ধন্যবাদ প্রদান করেন সৈয়দ রেজাউল হোসেন কাজী রেজা।