দুর্বৃত্তের গুলিতে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু (৫৫) ও সামিয়া আফনান প্রীতি (২০) নামে এক কলেজছাত্রী নিহত হয়েছেন রাজধানীর শাহজাহানপুর আমতলা রেলগেটে। আহত হয়েছেন টিপুর গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্না। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত টিপু মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক। তার স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১-১১-১২ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর। রাজধানীর গুলশানে ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যা মামলায় জড়িতদের সঙ্গে টিপুর নামও এসেছিল। সে সময় র্যাব টিপুকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডেও নেয়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে অভিযোগপত্র থেকে টিপুর নাম বাদ দেওয়া হয়। মিল্কির ভাই অভিযোগপত্রে টিপুর নাম না থাকায় ২০১৮ সালে নারাজি দিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ নেতা টিপু মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল গভর্নিং বডির দুইবারের নির্বাচিত সদস্য। সর্বশেষ গত জুনে স্কুলের গভর্নিং বডির নির্বাচনে টিপু স্কুলের মাধ্যমিক শাখার সদস্য নির্বাচিত হন। তার মেয়ে এক সময় আইডিয়াল কলেজের ছাত্রী ছিলেন। ছেলে বর্তমানে ওই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। টিপুর বিরুদ্ধে আইডিয়াল স্কুলের আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা অনেকেই
অভিযোগ করেন, স্কুলের আশপাশের সব ফুটপাত ভাড়া দিয়ে টিপুর লোকজন টাকা তুলতেন। স্কুলের সামনের সড়কের দুই পাশে গাড়ি রাখলেই সিটি করপোরেশনের নামে টিপুর লোকদের চাঁদা দিতে হতো। আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষক প্রতিনিধি ও গভর্নিং বডির সদস্যরা রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে টিপুর লাশ দেখতে যান। তাদের একজন দাবি করেছেন, দলীয় আধিপত্য, কোন্দল, চাঁদার ভাগ-বাটোয়ারা ও পুরনো হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে টিপু খুনের ঘটনা ঘটতে পারে।
গুলিবিদ্ধ মনির হোসেন মুন্না হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, তার গাড়ির মালিক জাহিদুল ইসলাম টিপুর বাসা শাহজাহানপুর বাগিচা এলাকায়। ঘটনার সময় তারা গাড়ি নিয়ে মতিঝিল এজিবি কলোনি থেকে বাগিচার বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে শাজাহানপুর আমতলা মসজিদ এলাকায় পৌঁছালে মুখোশ পরা এক ব্যক্তি তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এতে গাড়ির ভেতর থাকা তারা দুজন গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা জানান, ওই আওয়ামী লীগ নেতার গাড়ি লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা যখন গুলি ছোড়ে তখন পাশেই রিকশায় থাকা প্রীতি নামে এক কলেজছাত্রী আহত হয়ে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাদের ৩ জনকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক টিপু ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই শিক্ষার্থীর বান্ধবী সুমাইয়া জানান, প্রীতির বাসা শান্তিবাগ মগা হাজির গলিতে। রাতে তারা দুজন ঘুরতে বের হয়েছিলেন। সুমাইয়া প্রীতিকে রেলগেট থেকে রিসিভ করে তিলপাপাড়ায় তার বাসায় রিকশায় করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পান। পরে দেখতে পান প্রীতি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কে বা কারা গুলি করেছে তা বলতে পারেননি সুমাইয়া। প্রীতি বদরুন্নেসা কলেজের অনার্সের ছাত্রী। তার বাবার নাম মমিনুল ইসলাম।
মতিঝিল বিভাগের সবুজবাগ জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মনতোষ বিশ্বাস বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকা-। দুর্বৃত্তরা জাহিদুল টিপুকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালালে রিকশাযাত্রী প্রীতিও গুলিবিদ্ধ হন। কে বা কারা ওই তিনজনকে গুলি করেছে সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা জায়নি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। ঘটনাস্থলে সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিটসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ করছেন। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |