দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শরীফ উদ্দীনের চাকরিচ্যুতির আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন পর্যালোচনা করছে । তবে কী সিদ্ধান্ত হবে, শরীফেরই বা কী হবে তা এখনো অনিশ্চিত। এদিকে দুদক থেকে সন্তোষজনক সমাধান না পেলে সাবেক উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) শরীফ আগামী সপ্তাহে উচ্চ আদালতে রিট করবেন বলে জানিয়েছেন দুদক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের এক প্রজ্ঞাপনে শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা ২০০৮-এর ৫৪(২) ধারা অনুযায়ী তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ ধারা বাতিলসহ শরীফের অপসারণের আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন তার সহকর্মীরা। এর পর ২৭ ফেব্রুয়ারি শরীফ তার চাকরিচ্যুতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য কমিশনে আবেদন করেন।
এ বিষয়ে শরীফ উদ্দীন বলেন, আমি চাকরিচ্যুতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছি। কমিশন আমাকে এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি। তারা বিষয়টি সমাধান না করলে আমি উচ্চ আদালতে যাব।
দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড প্রসিকিউশন) মঈদুল ইসলাম বলেন, শরীফের বিষয়টি কমিশনের সমাধান করা উচিত ছিল। কারণ দুদকের চাকরিবিধিতে ৫৪(২) রাখা হয়েছে, সেটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন বিষয়। এটি টিকবে কী টিকবে না, এখনই বলা যাচ্ছে না। বিচারাধীন একটি বিধি দ¦ারা তাকে চাকুরিচ্যুত করা হলো। এ বিধিটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। এখন তিনি যেহেতু আবেদন করেছেন, কমিশনের উচিত হবে দ্রুত বিষয়টি ভুল হয়েছে জানিয়ে সমাধান করা। তা না হলে তিনি হয়তো আদালতের আশ্রয় নেবেন। এতে দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
দুদক সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানান, শরীফের আবেদনের পর গতকাল মঙ্গলবার একটি কমিশন সভা হয়েছে। এর আগের সপ্তাহেও একটি কমিশন সভা হয়েছে। দুই সভায় শরীফের বিষয়টি আলোচনা করা হয়। তবে এটি রেজুলেশনে আনা হয়নি। আলোচনা হলেও সমাধান করার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। ফলে শরীফের কী হবে তা এখন বলা যাচ্ছে না। তারা আরও বলেন, আইনজীবীর পরামর্শ ছিল কমিশনে আবেদনের দুই সপ্তাহের মধ্যে সমাধান না হলে শরীফ হাইকোর্টে রিট করতে পারবেন। যদি এর মধ্যে সমাধান না হয় তা হলে আগামী সপ্তাহে শরীফ রিট করবেন।
দুদক কর্মকর্তারা বলেন, শরীফ উদ্দীন সৎ ও সাহসী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি চট্টগ্রামে কর্মরত থাকা অবস্থায় কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি মামলা করেন। এতে তিনি অনেকের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন। এর পর তাকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়। পরে কোনো নোটিশ না দিয়েই চাকরিচ্যুত করা হয়। কর্মকর্তারা আরও বলেন, যদি শরীফ উদ্দীনের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তবে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে তার শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। এভাবে বিদায় করা অমানবিক।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কমিশন সভায় দুদক চাকরি বিধিমালার ৫৪(২) ধারা বাতিল, দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চলমান বিভাগীয় মামলা ও শোকজসহ শরীফের চাকরিচ্যুতির বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগের সভায় দুদক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চলমান বিভাগীয় মামলা ছাড়াও শোকজ প্রদানের যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এ সংক্রান্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া উচ্চ আদালতে বিচারাধীন ৫৪(২) ধারা বিষয়ে কী করা যায় সে জন্য দুদকের লিগ্যাল ও প্রসিকিউশন বিভাগের মতামত নেওয়া হবে। ওই মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আইনজীবীদের রিটের আদেশ ১৩ মার্চ
শরীফ উদ্দীনকে ঘিরে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের বিষয়ে স্বাধীন তদন্ত চেয়ে দায়ের রিটের ওপর হাইকোর্ট আদেশের জন্য ১৩ মার্চ দিন ধার্য করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন।
শরীফ উদ্দীনের চাকরিচ্যুতির ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের বিষয়ে স্বাধীন তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি এ রিট করেন শিশির মনিরসহ সুপ্রিমকোর্টের ১০ আইনজীবী।