একটি চক্র বিদেশ থেকে আসা যেসব যাত্রী বিমানবন্দর এলাকায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেন তাদের টার্গেট করত। কৌশলে এসব প্রবাসীদের সঙ্গে তারা সখ্যতা গড়ে তুলতেন। একপর্যায়ে নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে সর্বস্ব লুটে নিতেন। এ ছাড়া কখনও পিস্তল ও ছুড়ি ঠেকিয়ে ছিনতাই বা ডাকাতিও করতেন তারা।
গতকাল শনিবার এরকমই একটি ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের একটি টিম। চাঞ্চল্যকর ডাকাতির একটি মামলার জড়িত ছিলেন তারা। আসামিদের গ্রেপ্তারের পর লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার ও ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন, মো. মাসুদুল হক ওরফে আপেল, মো. আমির হোসেন হাওলাদার ও মো. শামীম। রাজধানীর হাতিরঝিল থানার মীরবাগ এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে পাঁচটি পাসপোর্ট, দুটি এনআইডি কার্ড, দুটি এটিএম কার্ড, একটি আইপ্যাড, একটি ওয়ার্ক পারমিট কার্ড, একটি বিএমইটি কার্ড, একটি অফিস আইডি কার্ড, একটি স্টিলের চাকু ও নগদ ৫৫ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
আজ রোববার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, গত ৭ সেপ্টেম্বর মো. লিটন সরকার নামের এক প্রবাসী পাঁচ বছর পর মিশর থেকে তুর্কি এয়ারলাইনসযোগে বাংলাদেশে আসেন। তিনি হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর টার্মিনাল থেকে বিমানবন্দর গোল চত্ত্বরে ফুটওভার ব্রিজের নিচে গিয়ে বাসার উদ্দেশে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেন। এ সময় অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয়জন ধারাল চাকু ঠেকিয়ে তার সঙ্গে থাকা হ্যান্ডব্যাগ ও লাগেজ ব্যাগ নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ছিনতাইকারী দলেল সদস্যরা তাকে ঘটনাস্থল থেকে একটি বাসে তুলে ঘটনার বিষয়ে কাউকে কোনো কিছু না জানানোর জন্য ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে।
হাফিজ আক্তার আরও জানান, লিটন সরকারের হ্যান্ডব্যাগ ও লাগেজে থাকা তার একটি পাসপোর্ট, মিশরের ভিসা, বিমানের টিকিট, আট আনা ওজনের সোনার চেইন, দুটি মোবাইল সেট, একটি স্মার্ট কার্ড, প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড়সহ নগদ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে যায় ডাকাতরা। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিমান বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। এই মামলার তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগ।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, মামলাটি তদন্তকালে গোয়েন্দা তথ্য উপাত্ত্ব বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মাসুদুল, আমির হোসেন ও শামীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেন। কখনও ডাকাতি, কখনও ছিনতাই, কখনও অজ্ঞানপার্টির সদস্য হিসেবে তারা কাজ করতেন। দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বিদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী দেশে আসা শুরু করায় এই সময়কে বেছে নিয়েছে চক্রটি।
পুলিশ জানায়, বিদেশ থেকে আগত যেসব যাত্রী একা বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেন তাদের টার্গেট করেন চক্রের সদস্যরা। তারা প্রবাসীদের অচেতন করতে খাদ্যদ্রব্য হিসেবে চা, কফি, জুস, ডাবের পানি ইত্যাদি ব্যবহার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে ডিবি।