ঢাকা : বন বিভাগের কর্মকর্তারা বানের পানিতে ভেসে আসা বুনো হাতি ‘বঙ্গ বাহাদুর’ কে বাগে আনা যাচ্ছে না। তাকে বশে আনতে নতুন কৌশল নিয়েছে ।

ইতোমধ্যে হাতিটিকে বশে আনতে কয়েক দফায় চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে অচেতন করা হয়েছে। অচেতন করে পায়ে শিকল বাধলেও কোনো কাজ হয়নি। চেতন ফিরে সেই শিকল ছিঁড়ে ফেলেছে একাধিকবার।  এবার হাতিটিকে বশে আনতে খাবার কম দিয়ে তাকে দুর্বল বানানোর কৌশল নিয়েছে বন বিভাগের কর্মকর্তা। তাদের ভাষ্য, হাতিটি দুর্বল হলে আর শিকল ছিঁড়তে পারবে না। তাকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নেয়াও সহজ হবে।

ঢাকার বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক বলেন, শিকল ছেঁড়ার ভয়ে তাকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া পায়ে শিকল নিয়ে এটি কাদার মধ্যে পড়ে গেছে। দ্রুত উদ্ধার করা প্রয়োজন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ হাতি উদ্ধারে গাজীপুর থেকে যে তিনটি হাতি আসার কথা, তা এখনো আসেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাইমুল নাসের ঢাকাটাইমসকে জানান, বুনো হাতি পোষ মানানো খুব কঠিন। আর বঙ্গ বাহাদুর খুবই শক্তিশালী । এ কারণে তাকে বশে আনতে সময় লাগবে। আর বশে আনতে নানা কৌশল গ্রহণ করতে হবে। এ কারণেই হয়তো খাবার কম দিয়ে তার শক্তি কমিয়ে আনতে চাইছে বন বিভাগ।

হাতিটিকে খাবার কম দিয়ে দুর্বল বানানো হচ্ছে, এতে হাতিটির জীবন বিপন্ন হবে না? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. নাইমুল বলেন, এতে জীবন বিপন্ন হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ খাবার কম দিলে তাকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে আনাও সহজ হবে। এতে সে জীবনী শক্তি পাবে বেশি। কিন্তু ক্লান্ত হবে না।

অধ্যাপক নাইমুল নাসের বলেন, হাতি এমনিতেই খাবার খায় বেশি সময় ব্যবধানে। দুই/এক দিন না খেলেও হাতির কোনো সমস্যা হয় না। আর এটি যেহেতু বুনো। তার খাবার চাহিদাও কম।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে হাতিটিকে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে অচেতন করা হয়। পরে হাতিটিকে ধরে পায়ে ও শরীরে শিকল-দড়ি দিয়ে একটি আমগাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে হাতিটি শিকল আর দড়ি ছিঁড়ে কাছের একটি জলাশয়ে নেমে পড়ে।

গত রবিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে হাতিটিকে দ্বিতীয় দফায় চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু ওষুধের মাত্রা কম হওয়ায় হাতিটির অচেতন হতে দেরি হচ্ছিল। পরে আরও তিনবার চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। কিছুক্ষণ ছুটোছুটির পর হাতিটি ঝিমিয়ে পড়ে। এ সুযোগে হাতির পায়ে শিকল-দড়ি পরানো হয়।

এ বিষয়ে ঢাবির এই অধ্যাপক বলেন, চেতনানাশক ওষুধ দেয়ার ক্ষেত্রেও সতর্ক হতে হবে। কারণ মাত্রায় বেশি পরিমাণ হলে হাতিটি মারাও যেতে পারে।

ভারতের আসাম রাজ্য থেকে বন্যার পানিতে ভেসে হাতিটি গত ২৮ জুন এ দেশে আসে। ব্রহ্মপুত্র নদ বেয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে। এরপর বগুড়ার সারিয়াকান্দি হয়ে যমুনা নদীর পানিতে ভেসে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের দুর্গম ছিন্নারচরে ১১ দিন অবস্থান করে। গত ২৭ জুলাই হাতিটি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় যায়।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031