আওয়ামী লীগ নেতা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর চিত্ত রঞ্জন সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন । এজন্য সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে তাকে সাময়িক বহিস্কারও করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেন তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না, জানতে চেয়ে নোটিশও দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চিত্ত রঞ্জনের আপত্তিকর একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ভুক্তভোগী ওই নারী তার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেন। গত সোমবার ওই মামলায় জামিন পাওয়ার পর চিত্ত রঞ্জন এ বিষয়ে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যেখানে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন তিনি।
তার দেওয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘আমার প্রিয় সবুজবাগবাসী, বিশেষ করে ৫নং ওয়ার্ডবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, ভুল করে হোক বা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েই হোক আমি আপনাদের মনে কষ্ট দিয়েছি। আমি জানি, অতীতের ন্যায় সবসময় আপনারা আপনাদের ভালোবাসা দিয়ে আমার পাশে থাকবেন। আমি এই ষড়যন্ত্রের পেছনে থাকা মুখগুলোর মুখোশ উন্মোচন করবোই। আপনাদের উদ্দেশ্যে পুরো বিষয়টি তুলে ধরলাম।
এরপর তিনি লেখেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে নারীটি শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনেছেন। তার শ্বশুর বাড়ির সাথে আমার দীর্ঘ দিনের শত্রুতা। এটি ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নয়। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঐতিহ্যবাহী মন্দির শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী কালিমাতা মন্দির ও মহাশ্মশানের জায়গা অন্যায়ভাবে অবৈধ দখল করে রেখেছিল অভিযোগকারী নারীর শশুর বাড়ির পরিবারের কয়েকজন সদস্য। ১৯৯৫ সালে আমি মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকে এই পরিবারসহ মন্দিরের জায়গা অবৈধ দখল করে রাখা সকলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাসহ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি এবং তাদের অনেক আর্থিক ও সামাজিক ক্ষতি করতে সক্ষম হই। সেই থেকেই এই সরদার বাড়ির সাথে আমার শত্রুতার সূত্রপাত। এর আগেও বহুবার তারা আমাকে বহু হামলা মামলার সম্মুখীন করেছে। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে।’
সাম্প্রতিক আলোচিত ঘটনা নিয়ে তিনি লেখেন, ‘বর্তমানে যে ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে তারা আমাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইছে তার ছক তারা বহুদিন আগে থেকে একেছেন। এর পেছনে সবুজবাগ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশ্রাফুজ্জামান ফরিদের সরাসরি মদদপুষ্ট হয়ে করছেন। ফরিদ অতি অল্প সময়ে ক্যাসিনো কান্ড, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক শক্তির অপব্যবহার করে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোয়ন বঞ্চিত হবার পর থেকেই আমার পেছনে নানা ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। এছাড়াও আমি কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ফরিদ, তার ভাই মুরাদ ও ভাগ্নে শাওনের মাদক ব্যবসাসহ সকল অপকর্ম বন্ধে জোরালো ভূমিকা রাখি। তার জেরেই তারা অভিযোগকারী এই পান্নাকে আমার পেছনে লেলিয়ে দেয় বলে আমি নিশ্চিত। এটি এই দুই গ্রুপের পূর্ব পরিকল্পনার অংশ।’
এখানে উল্লেখ্য যে, অভিযোগকারী নারী আফরোজা পান্না ও তার স্বামী লিটন সরদার অনলাইন সাংবাদিকতা করে বলে দীর্ঘদিন যাবৎ তারা আমার বিভিন্ন মানবিক ও সামাজিক কার্যক্রমের নিউজ কভার করতো এবং নানা সময়ে আমার কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে চলতো বিধায় তাদের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক ছিলো।
সেই সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে গত কয়েকদিন আগে অভিযোগকারী পান্না ও তার স্বামী লিটন আমার কাছে আসে এবং অবৈধভাবে দখল করা মন্দিরের একটি দোকান তার শ্বশুর সমির উদ্দিন সরদার অন্য কারো কাছে বিক্রি করে দিয়েছে বলে আমাকে জানায়। এখন তাদেরকে দোকানটি সংস্কার করার অনুমতি দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। লুকিয়ে মন্দিরের সম্পত্তি অন্য কারো কাছে বিক্রি করায় আমি তাদেরকে তিরষ্কার করি এবং মন্দিরেত বকেয়া ভাড়া ৪০ হাজার টাকা রশিদের মাধ্যমে পরিশোধ করে তারপর দোকানটি সংস্কার করতে পারবে বলে জানিয়ে দেই। সেদিন সহ তারা আরো কয়েকদিন একই দাবি নিয়ে আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তারা ফরিদকে সাথে নিয়ে এই অপকৌশলের আশ্রয় নেয়।
রাজনীতির বাইরেও আমি একজন সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক ও অনুরাগী। প্রতি বছর শারদীয় দূর্গা উৎসবে আমি নানা সামাজিক নাটক মঞ্চায়ন করার ব্যবস্থা করি।এটি সকলেরই জানা। এবারো পূজা সামনে রেখে একটি নাটক মঞ্চায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নাটকটির নাম “ঢাকার অসুখ- ডাক্তার চাই”। নাটকটিতে আমারও একটি চরিত্র রয়েছে। ঘটনার দিন আমি আমার কার্যালয়ের পাশের রুমে নাটকটির পরিচালক সাইফ বাপ্পী ও অভিনেত্রী নদীর সাথে নাটকের রিয়ার্সেল করছিলাম। ঠিক তখনই পান্না তার স্বামীসহ সেখানে উপস্থিত হোন। তারপর কিছুক্ষণ অবস্থান করে আমাদের রিয়ার্সেল দেখতে থাকেন। তারপর আমার সাথে জরুরী কথা আছে বলে সবাইকে পাশের রুমে যেতে বলেন। সবাই অন্যরুমে যাওয়ার পর সে আমার সাথে একটু অভিনয় করবে বলে আবদার করে। এবং তার স্বামীকে নিয়ে বাইরে চলে আসে। কিচ্ছুক্ষণ পর আবার এসে আমাকে আমার সাথে রিয়ার্সেল করতে চায় এবং আমি সরল মনে রাজি হয়ে নাটকের একটি দৃশ্য অভিনয় করি। আর অভিযোগকারী পান্না এই সুযোগে গোপন ক্যামেরায় তা ধারন করে নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে এডিটিং করে বিষয়টিকে বাজে ভাবে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করে। আমাকে রাজনীতি থেকে বিতারিত করতে পারলে ফরিদ গংদের অবৈধ কর্মকান্ড পুনরায় শুরু করতে পারবে বিধায় অভিযোগকারী পান্নাকে মোটা অংকের টাকা আর নানা সুযোগ সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে তারা এই ভাইরাল করার কাজটি করে।
অতীতেও বহুবার তারা আমাকে এমন বিব্রতকর ও সম্মানহানিকর পরিস্থিতিতে ফেলেছিল কিন্তু প্রতিবারই আমি আমার দৃঢ় মনোবল ও জনগণের দোয়ায় সকল প্রতিকূলতা জয় করেছি। এবারো তাদের এই ষড়যন্ত্র থেকে আইনি মোকাবিলার মাধ্যমে বেড়িয়ে আসবো।’️