২০১৭-২০২০ সাল পর্যন্ত শিরায় মাদক গ্রহণকারী ও যৌন কর্মীদের মধ্যে ১১১০ জনের রক্ত পরীক্ষায় ১১৪ জন এইচআইভি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশের কারাগারগুলোতে । যার মধ্যে ৭০ জন ছিল রাজশাহী কারাগারে। তাদের মধ্যে অনেকে ছাড়া পেয়েছেন, আবার কেউবা জেলে ঢুকেছেন। কিন্তু এইডস রোগীদের এই সংখ্যার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে বেসরকারি সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশ দেশের কয়েকটি জেলখানায় এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা পরিচালনা করে। জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের সহযোগিতায় পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি বড় কারাগারে ১১১০ জন অবস্থান করছিলেন, যারা শিরায় সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ১১৪ জন ছিলেন যারা এইচআইভি/এইডসে আক্রান্ত। এমনকি কারাগারে থাকার কারণে তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত ছিলেন।
এ তথ্যর ওপর ভিত্তি করে দেশের ২৫টি কারাগারে এইচআইভি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম অনুমোদনের জন্য এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। পুলিশ এবং কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরসাপেক্ষে কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি রয়েছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয়
অর্থ ইতোমধ্যে দ্য গ্লোবাল ফান্ড ও বিসিসিএম থেকে অনুমোদিত হয়েছে।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ১ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দেশের কারাগারগুলোর মধ্যে ২৫টি কারাগারে এইচআইভি কার্যক্রম আরম্ভ করা যেতে পারে। কার্যক্রম বাস্তবায়নে দুটি কৌশল অনুসরণ করা হবে। যেমন ৮টি কারাগারের (কেরানীগঞ্জ, কাশিমপুর-২টি, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট) স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ২ জন করে স্টাফ পদায়ন ও বিদ্যমান স্টাফদের দক্ষতা বাড়ানো। এ ছাড়া আরও ১৭টি কারাগারে শুধু স্যাটেলাইট এইচআইভি পরীক্ষা সেবা পরিচালনা করা। এসব স্যাটেলাইট সেবাসংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর সদর হাসপাতালের এমটি ল্যাব ও কাউন্সিলর পরিচালনা করতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, কারাগারে কয়েদিদের মধ্যে এইডসসংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের বিষয়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এ সেবা শুরু করা হবে। তিনি বলেন, দেশের এইচআইভি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া কারাগারগুলোর সাধারণ কয়েদিদের মধ্যেও এইচআইভি ও যক্ষ্মা রোগী রয়েছে। কিন্তু তারা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। তাদের মাধ্যমে কারাগারে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেই বিয়ষটি বিবেচনায় নিয়ে এ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর আগে এক গবেষণায় কারাগারে এইচআইভি রোগী শনাক্ত হয়।
জানা গেছে, বিগত ১ জুন রাজধানীর গুলশান স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ প্রশিক্ষণ একাডেমি, কারা কর্তৃপক্ষ অংশ নেয়। ওই কর্মশালায় এ প্রস্তাবটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে ডিআইজি প্রিজন (ঢাকা) তৌহিদুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, কারাগারে সম্প্রতি এক এইচআইভি রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার কারাগারে ১ জন রোগী আছেন। ১১৪ জন এইচআইভি রোগীর তথ্য আমাদের জানা নেই। তবে কেয়ার বাংলাদেশ যে গবেষণা করেছিল তার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। কিন্তুকারা কর্তৃপক্ষকে এ গবেষণার ফল দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, কারাগারে যদি ১১৪ জন এইচআইভি রোগী চিহ্নিত হয়ে থাকে, তা হলে তাদের পরিচয় সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে উচিত শনাক্ত করে দেওয়া।
জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম সূত্রে জানা গেছে, বড় ৮টি কারাগারে কয়েদিদের ৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে। এর মধ্যে ১. কয়েদিদের জন্য এইচআইভি পরীক্ষা সুবিধা। ২. পরীক্ষার পর শনাক্ত রোগীদের এআরভি চিকিৎসা দেওয়া, যারা আগেই এআরভি সেবা নিয়েছেন তাদের চিকিৎসা অব্যাহত রাখা। ৩. শিরায় মাদক গ্রহণকারী যেসব কয়েদি আগে মেথাডন চিকিৎসা নিতেন তাদের ওএসটি সেবা অব্যাহত রাখা। প্রাথমিকভাবে এ সেবা কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে বাস্তবায়ন করা। ৪. কয়েদিদের মধ্যে হেপাটাইটিস সি, যৌন রোগ শনাক্ত করা ও তাদের চিকিৎসা দেওয়া, প্রাথমিকভাবে যক্ষ্মা শনাক্ত করা ও রেফার করা। ৫. কয়েদিদের মধ্য থেকে পিয়ার এডুকেটর নির্বাচিত করে তার মাধ্যমে কয়েদিদের জন্য যৌন রোগ, এইচআইভি, হেপাটাইটিস, যক্ষ্মাবিষয়ক সচেতনতামূলক সেশন পরিচালনা করা। ৬. কয়েদিদের মধ্যে দুর্বল ব্যক্তিদের মনো-সামাজিক কাউন্সেলিং করা। ৭. এইডস দিবস, মাদক নিমূল দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন করা। বিসিসি সেশনগুলো পরিচালনার সুবিধার্থে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ তৈরি ও বিতরণ করা। এ ছাড়া বাকি ১৭টি কারাগারে মাসে দুবার স্যাটেলাইট এইচআইভি পরীক্ষা পরিচালনা করা হবে।
কারাগারের পাশাপাশি পুলিশের সঙ্গেও এ সংক্রান্ত ৫ ধরনের সেবা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১. পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশিক্ষণ একাডেমির প্রশিক্ষণ কারিকুলামে এইচআইভি/এইডস বিষয়টি সম্পৃক্তকরণ ও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া। ২. এইচআইভির জন্য ২৩টি অগ্রাধিকার জেলার পুলিশ সদস্যদের ২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা। ৩. পুলিশ পরিচালিত মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন হাসপাতালে কেয়ার বাংলাদেশসহ এনজিও কর্তৃক রেফারকৃত শিরায় মাদকগ্রহণকারীদের চিকিৎসা দেওয়া। ৪. পুলিশ পরিচালিত হাসপাতালে এইচআইভি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে এসব হাসপাতালে পরীক্ষার কিট সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৩ হাজার ৪১০ টাকা সম্ভাব্য বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে, যা দ্য গ্লোবাল ফান্ড ও বিসিসিএম থেকে অনুমোদন হয়েছে। এ বরাদ্দের মধ্যে সেভ দ্য চিলড্রেনের আংশিক অনুদান রয়েছে। এ বরাদ্দের মধ্যে ৫০ লাখ ৭৩ হাজার ৪৯৫ টাকা এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম ব্যয় করবে ওষুধ, পরীক্ষা, কিট ও অন্যান্য ক্লিনিক্যাল যন্ত্রপাতি জন্য। এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এইচআইভি কর্মসূচি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ৩৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭০২ টাকা দ্য গ্লোবাল ফান্ড ও বিসিসিএম হতে অনুমোদিত হয়েছে। এ ছাড় কিছু প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষণ মডিউল, কর্মশালা আইএনওডিসি (জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা) সরাসরি আয়োজন ও বাস্তবায়ন করবে।
এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম কারাগারে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কারা কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, দেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভির সংক্রমণ প্রায় শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। দেশের এইচআইভির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন শিরায় মাদকগ্রহণকারী, নারী/পুরুষ যৌনকর্মী ও হিজড়া। এ জনগোষ্ঠী ছাড়াও কারাগারগুলোর সাধারণ কয়েদিদের মধ্যে সেবাবঞ্চিত এইচআইভি ও যক্ষ্মা রোগী রয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচি পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। তাদের মাধ্যমে কারাগারের অন্যান্য কয়েদির মধ্যে রোগী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |