একটি চক্র ঘটনাটি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের। রাজধানীর পল্লবী এলাকার ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীকে পার্লারে কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রলোভন দেখি ভারতে পাচার করে । সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে যখন পাচার করা হয়, তখন ওই তরুণী বিষয়টি বুঝতে পারে। পরে মুঠোফোনে বিষয়টি তার মাকে জানায়।

কোনো উপায় না পেয়ে কিশোরীর মা একাই তার মেয়েকে উদ্ধার করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। তিনি পরিচয় গোপন করে পাচার চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদেরকে জানান, তিনি উচ্চ বেতনের যেকোনো কাজ করতে রাজি। পরে চক্রটি একই প্রক্রিয়ায় তাকেও ভারতে পাচার করে। সেখানে গিয়ে ওই চক্রের হাত থেকে কৌশলে পালিয়ে যান কিশোরীর মা।

ভারতের বিভিন্ন ‘নিষিদ্ধ পল্লীতে’ মেয়ের সন্ধান করতে থাকেন সেই কিশোরীর মা। একপর্যায়ে ভারতের উত্তর দিনাজপুরের পাঞ্জিপাড়ায় একটি ‘নিষিদ্ধ পল্লীতে’ মেয়ের সন্ধান পান। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় উদ্ধার করেন মেয়েকে।
শুধু তাই নয়, মেয়েকে নিয়ে দেশে ফেরার সময় সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে বিএসএফের কাছে তারা মা-মেয়ে আটক হন। কিন্তু বিএসএফ সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে।

এরপর গতকাল রোববার পাচারকারী চক্রের মূল হোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। রাজধানীর পল্লবী এবং মাদারীপুরের শিবচরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪। তিনজন হলেন চক্রের মূলহোতা মো. কালু ওরফে কাল্লু (৪০), মো. সোহাগ ওরফে নাগিন সোহাগ (৩২) ও মো. বিল্লাল হোসেন (৪১)।

আজ সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, মেয়েকে উদ্ধারে মায়ের এমন দুঃসাহসিক কাজ বেশ আলোড়ন তোলে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর র‌্যাব তদন্ত শুরু করে। পরে অভিযুক্তদের ওপর নজরদারি শেষে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাবের কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। মূলত ভারতে নিয়ে গিয়ে সুপারশপ, বিউটি পার্লারসহ বিভিন্ন চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তারা দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণীদের ফাঁদে ফেলে পাচার করত। এ কাজে সারা দেশে তাদের অন্তত ২০-২৫ জন সহযোগী রয়েছে। এর বাইরে সীমান্ত এলাকাতেও তাদের কয়েকজন নারী সহযোগী রয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, পাচারকারীদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031