মডেল হিসেবে পরিচিতি পেলেও শোবিজে তার তেমন কোনো কাজই দৃশ্যমান নয়। ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। তবে গত কয়েক বছরে বেশকটি ঘটনায় আলোচনায় আসেন তিনি। এর মধ্যে গেল ১ আগস্ট রাতে রাজধানীর বারিধারার বাসা থেকে তাকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এ সময় তার বাসা থেকে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। নানান অপরাধেই তিনি জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চট্টগ্রামের মেয়ে মেধাবী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা অবশ্য এমন ছিলেন না। লেখাপড়ার পাশাপাশি ভালো গান করা আর ছবি আঁকা ছিল তার দুটো বাড়তি পালক। প্রতিবেশীদের কাছে পরিচিত ছিলেন শান্ত ও মিষ্টি মেয়ে হিসেবেই। তবে কৈশোর পেরোতেই তার মনের ভেতর উঁকি দেয় অর্থের লোভ। পরে ঢাকায় গিয়ে পূর্ণতা পায় তার সেই চাহিদা। যদিও এ জন্য পিয়াসার স্বজনরা দুষছেন তার কৈশোরপরবর্তী সময়ের প্রথম প্রেমকে, যেখানে প্রেমিক ছিলেন ধনাঢ্য পরিবারের এক সন্তান। ওই সম্পর্কের হাত ধরেই পা বাড়ান বিপথে। পিয়াসার ঢাকার জৌলুসপূর্ণ জীবনের সবটাই জানতেন মা নব্যুয়াত আরা সিদ্দিকা রকি। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের জামালখান ওয়ার্ডের মহিলাবিষয়ক এই সম্পাদিকা নিয়মিত ঢাকায় যাওয়া-আসা করতেন মেয়ের বাসায়। মেয়ে বিদেশ থেকে দামি জুতা,কসমেটিকস কিংবা কাপড়-চোপড় আনলে তা তিনি প্রতিবেশীদের ডেকে দেখাতেন। এ নিয়ে মায়ের বিরোধিতাই ছিল না। এক প্রতিবেশী বলেন, ‘আমরা কখনো পিয়াসার মাকে বলতে শুনিনি- এসব আমাদের দরকার নেই, তুমি লেখাপড়া শেষ করো। বরং বলতেন- দেখেন আমার মেয়ে এগুলো থাইল্যান্ড থেকে এনেছে।’
তবে নব্যুয়াত আরা সিদ্দিকা রকির দাবি, ঢাকায় যাওয়ার পর কিছু লোক তার মেয়েকে বিপথে নিয়ে গেছেন। তিনি অনেকবার মেয়েকে ফেরানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ফেরেনি। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে যারা খারাপ পথে নিয়ে গেছে, আমি চাই তাদের বিচার হোক।’ তার দাবি- নগরীর নেভাল এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত পিয়াসাকে হাসপাতালের শয্যায় রেখে অন্যের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসে তার প্রেমিক। সেই ঘটনা তাকে আঘাত দিয়েছে। আর সেখান থেকেই বিপদগামী হওয়া শুরু পিয়াসার।
নগরীর আসকার দীঘিরপাড় এলাকার আরকে মিশন রোডে পিয়াসাদের তিনতলা পারিবারিক বাড়ি। বাবা মাহবুবুল আলম সাবেক ফুটবলার। রাজনৈতিক পরিবার হিসেবেও খ্যাতি আছে তাদের। গ্রামের বাড়ি পটিয়া। মা নব্যুয়াত আরা সিদ্দিকা রকির বাবার বাড়ি কুমিল্লা। ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাসের পর আগ্রাবাদ সরকারি কমার্স কলেজে এইসএসসিতে ভর্তি হন ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। তখনই কলেজের পার্শ্ববর্তী এলাকার এক ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান আজমের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
একদিন বন্ধুর গাড়িতে করে প্রেমিকাকে নিয়ে আজম ঘুরতে যান নেভাল এলাকায়। পথে দুর্ঘটনায় তার ওই বন্ধু নিহত হন। আজম আর পিয়াসাও আহত হন। পরে প্রেমিকাকে নিয়ে তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তখনই এ সম্পর্কের কথা আজমের বাবা জানতে পারেন। কিন্তু তিনি এ সম্পর্ক মানেননি। এক সপ্তাহের মধ্যে আরেক ধনাঢ্য পরিবারের মেয়েকে আজমের বউ হিসেবে ঘরে তোলেন। হাসপাতালের শয্যায় এ খবর পান পিয়াসা। স্বজনরা বলেন, তখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি মেয়েটি। তার ওপর এমন খবর পেয়ে ভেঙে পড়েন। সুস্থ হওয়ার পর মা নব্যুয়াত আরা সিদ্দিকা রকি মেয়ে পিয়াসাকে ঢাকায় নানাবাড়ি পাঠিয়ে দেন। ভর্তি হন বেসরকারি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে।
কিছু দিনের মধ্যে দেশের একটি ফ্রিজ ও টেলিভিশন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পিয়াসা বাড্ডার নানির বাসা থেকে ওই ব্যক্তির ভাড়া করা নিকেতনের ফ্ল্যাটে গিয়ে ওঠেন। সেখানে তারা দুজনে স্বামী-স্ত্রীর মতো করে বসবাস করতেন, যদিও ওই শিল্পপতির স্ত্রী ও সন্তান ছিল। তারা দুজন একসঙ্গে বিদেশও যেতেন। পিয়াসার বাবার চিকিৎসা ও মা নব্যুয়াত আরার সঙ্গে দেখা করতে তিনি একাধিকবার চট্টগ্রামও আসেন। একসময় এশিয়ান টিভির পরিচালক ও প্রিভিউ কমিটির প্রধান পদে আসীন হন ওই শিল্পপতি। এর মধ্যে পিয়াসার পরিচয় হয় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলের সঙ্গে। এর পর পিয়াসা ছেড়ে যান আগের প্রেমিককে। ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি পরে পিয়াসা ঘোষণা দেন, মাত্র এক টাকার কাবিননামায় দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদকে বিয়ে করেছেন তিনি।
জানা যায়, ঢাকায় পিয়াসার জৌলুসপূর্ণ জীবনযাপনের খবর শুনে চট্টগ্রামের কিছু লোকও তার সঙ্গে সখ্য গড়ার চেষ্টা করেন। তবে তা হালে বেশি পানি পায়নি।