সেজান জুস কারখানাটি ভবন নির্মাণ নীতিমালা (বিল্ডিং কোড) না মেনেই তৈরি করা হয়েছিল রূপগঞ্জের হাশেম ফুড এন্ড বেভারেজ কোম্পানির । কারখানাটিতে ছিল না পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা ফায়ার সার্ভিসের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি)। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন অনেক অসঙ্গতি ও অনিয়ম উঠে এসেছে। গত ৫ আগস্ট রাতে তদন্ত কমিটি মোট ৪৪ পাতার প্রতিবেদন দাখিল করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। তদন্ত প্রতিবেদনে, কারখানার মালিকের অনিয়মসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার গাফলতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ৮ জুলাই রূপগঞ্জের হাসেম ফুডের সেজান জুস কারখানায় লাগা আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া ৪৯ জন শ্রমিকসহ মোট ৫২ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ৪৯ জন এতটাই পুড়ে গিয়েছিলেন যে শেষ পর্যন্ত ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে স্বজনদের কাছে তাদের লাশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারী গত ৫ আগস্ট রাতে ৪৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে কারখানার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গাফলতির বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। কলকারখানা অধিদপ্তরের গাফলতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অবগত করবে জেলা প্রশাসন।
মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, ওই কারখানার পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ ছিল না, বিল্ডিং কোডের কোনো দাপ্তরিক কাগজপত্র ছিল না, ফায়ার সার্ভিসের এনওসি পাওয়া যায়নি। সেই সঙ্গে ফায়ার সেফটিও ছিল না। এ ছাড়া সবচেয়ে বড় একটি অনিয়মের মধ্যে ছিল শিশুশ্রম। এসব অনিয়মসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে কারখানার মালিকের অনিয়ম পাওয়া গেছে তদন্তে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে ২০টি সুপারিশ করা হয়েছে। তাদের প্রথম সুপারিশে বলা হয়েছে, এ ধরনের কারখানাগুলোতে যাতে শিশুশ্রম বন্ধ করা হয়। দ্বিতীয়ত, যারা মারা গেছে তাদের শ্রম আইন অনুসারে ২ লাখ টাকা এবং যারা আহত হয়েছে তাদের আড়াই লাখ টাকা করে যেন মালিক পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়। বিল্ডিং কোড মানা, অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র আরও বেশি রাখা এবং প্রশিক্ষিত অগ্নিনির্বাপণ দল কারখানায় রাখারও সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। তিনি বলেন, নিচ তলার সেন্ট্রাল রুমে শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রসঙ্গত, গত মাসের ৮ জুলাই রূপগঞ্জের হাসেম ফুডস কারখানায় আগুনে পুড়ে ৫২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গত ১০ জুলাই কারখানা মালিক আবুল হাসেম, তার চার ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করা হয়। ওই দিনই আবুল হাসেম, তার চার ছেলেসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সম্প্রতি হাসেম ও তার চার ছেলে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। গত ১৫ জুলাই মামলার তদন্ত ভার সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়।