স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শনিবার (৭ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে অবস্থিত ফিল্ড হাসপাতালের উদ্বোধন করে। এসময় বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছেন । নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে নেই সাধারণ বেড-আইসিইউ। তাই এখন সময় এসেছে সংক্রমণ কমানোর।’
অথচ মন্ত্রী যখন গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলছেন ঠিক তখনই তার চারপাশে ছিল মানুষের ভিড়। আর এই ভিড়টা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা। তারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দুইপাশে, পেছনের সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এছাড়া চিকিৎসকের অ্যাপ্রোন ছাড়াও অনেকে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।যেখানে করোনা থেকে বাঁচতে মাস্ক পরা, জনসমাগমে না যাওয়া অর্থাৎ ভিড় না করা এবং কিছু সময় পরপর সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার কথা বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ দেশের জনস্বাস্থ্যবিদরা; সেখানে খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে মানা হয়নি কোনও স্বাস্থ্যবিধি।
এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন রাখলে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মানুষের কাছে যারা উদাহরণ তৈরি করবেন বলে ধরা হয়, তাদের এটা কোনোভাবেই করা উচিত হয়নি। এতে করে সাধারণ মানুষ ভুল বার্তা পায়। সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে আরও সতর্ক থাকা দরকার ছিল। মনে রাখতে হবে গণমাধ্যমে মুখ দেখানোর চেয়েও এখন জাতীয় স্বার্থ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ভূমিকা রাখা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ ভিড়ের ছবি দেখে সাধারণ মানুষ কী বার্তা পাবে জানতে চাইলে ‘এই মানুষগুলো সব মিথ্যা কথা বলে’- এমন মন্তব্য করেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান।
বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘এই মানুষগুলো যা বলছেন, সেগুলো সত্য নয়। কারণ তারা নিজেরাই স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। আর একজনের সঙ্গে আরেকজনের দূরত্ব একেবারেই নেই।’
অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘ক্যামেরায় চেহারা দেখানো আমাদের এখনকার কৃষ্টি হয়ে গেছে। এটা করার প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে এগুলো হয় এবং কোভিড অতিমারি শুরু হবার পর থেকেই প্রেস কনফারেন্সের যে চিত্র, সেটা নিয়েও গণমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হয়েছিল। তারপরও এ ধরণের বারবার পুনরাবৃত্তি আসলে চিকিৎসক সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে।’
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শতভাগ মাস্ক পরে থাকলে তাতে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা অনেক কম। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে সাধারণ মানুষ এত কিছু বোঝেন না। তারা যদি দেখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই অনেক মানুষের সঙ্গে বসে আছেন, চিকিৎসকরা বসে আছেন- সেটা মানুষের কাছে ভুল বার্তা দেবে।’
আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘সাধারণ মানুষের সচেতনতা এবং আমাদের সচেতনতার মধ্যে নিশ্চয়ই একটা পার্থক্য রয়েছে। আমাদের জন্য অর্থাৎ স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছেন তাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। নিজেরা সচেতন হতে হবে এবং সেটা অন্যদের দেখাতে হবে। কারণ আমাদের দেখেই সাধারণ মানুষ সচেতন হবে। তারা আমাদের ফলো করেন।’
কেবল মাইকিং বা বিজ্ঞাপন দিয়ে হবে না জানিয়ে আবু জামিল ফয়সাল আরও বলেন, ‘আমরা যতক্ষণ না পর্যন্ত মানুষের সামনে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারবো, ততক্ষণ সাধারণ মানুষ সচেতন হবে না।’