শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৮ বছর এবং এর বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দেওয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে । এ কার্যক্রম শুরু হলেও এসএসসি ও এইচএসসি সমমান পরীক্ষার্থীদের বেশিরভাগের বয়স ১৮ এর নিচে থাকবে। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া না গেলে এবং আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বরের মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে না আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে না। ফলে এসএসসি ও এইচএসসি সসমান পরীক্ষাও নেওয়া সম্ভব হবে না। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি সমমান পরীক্ষা এবার টিকার ফাঁদে আটকে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে গ্রুপভিত্তিক নৈর্বিচনিক তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়ার।
টিকার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘বেশিরভাগ শিক্ষক-কর্মচারীরা টিকা নিয়েছেন। আগামী চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে বাকি ৮৪ হাজার ৮৮৮ জনের টিকা দেওয়া সম্পন্ন হবে।’
এসএসসি ও এইচএসসি সমমান পরীক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘যেহেতু পরীক্ষার্থীদের বয়স ১৮ হয়নি, সে ক্ষেত্রে ১৮ বছর বয়সীদের টিকা কার্যক্রম শুরু হলেও তাদের টিকার আওতায় নিতে পারছি না। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি যদি অনূকূলে না আসে পরীক্ষা যদি না নেওয়া যায় সে ক্ষেত্রে মন্ত্রী বলেছেন- অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন করে ফলাফল দেওয়া হবে।‘
অ্যাসাইনমেন্ট বিষয়ে ড. মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘জিপিএ-৫ প্রতিযোগিতার পরীক্ষা সবচেয়ে ভালো মূল্যায়ন পদ্ধতি নয়। তাছাড়া অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন বর্তমানে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল করে তোলা এবং অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে সহায়ক।‘
গত বছর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রাতষ্ঠান বন্ধ থাকায় ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফলাফল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী এবং জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষাও নেওয়া সম্ভব হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব মূল্যায়নে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণে ব্যবস্থা নিয়েছে।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও সমমান এবং এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের জন্য ৬০ দিন এবং এইচএসসি ও সমমমান পরীক্ষার্থীদের জন্য ৮৪ দিনের পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচির অনুযায়ী অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত চার দিন আগের তথ্য উল্লেখ করে জানায়, সরকারি সকল শিক্ষকদের টিকা সম্পন্ন হয়েছে। আর ২০ হাজার ২২৪টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মোট শিক্ষক ৩ লাখ ৬৩ হাজার ২২২ জন। মোট টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ৪২৬ জন। বাকি রয়েছে ৮৪ হাজার ৮৮৮ জন। আগামী চার থেকে পাঁচ দিসের মধ্যে বাকিদের টিকা দেওয়া সম্পন্ন হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষামন্ত্রী একটি অনুষ্ঠানে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধিত শিক্ষার্থী মোট ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৬১ জন। প্রথম ডোজ সম্পন্ন করেছেন ৭৯ হাজার ৯১৪ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করেছেন ৬ হাজার ৭২ জন। আর শিক্ষক ৩৪ হাজারের বেশি নিবন্ধন করেছেন ৩০ হাজারের বেশি টিকা সম্পন্ন করেছেন।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রায় সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ কর্মজীবী এবং বয়স প্রায় সবার ১৮ বছরের উপরে। এদের বেশিরভাগই নিজস্ব উদ্যোগে টিকা নিয়েছেন।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেছেন, ‘উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কর্মজীবী ফলে নিজ নিজ দায়িত্বে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছেন। যারা টিকা নিতে পারেনি তাদের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম শুরু হলে তারা নিতে পারবেন।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের শিক্ষার্থীদের স্থানীয়ভাবে নিবন্ধন করে নিজ দায়িত্ব টিকা নেওয়ার নির্দেশনা জারি করেছে।