ঢাকা : আগামীকাল সোমবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদতবার্ষিকী।জাতীয় শোক দিবসের বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  সব প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জঙ্গিবাদ সমূলে উপড়ে ফেলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কোনো বাধাই বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া রুখতে পারবে না। যেকোনো মূলে জাতির জনকের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।
১৫ আগস্ট নিহতদের কথা স্মরণ করে তাদের রূহের মাগফেরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। শোক দিবসের বাণীতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী, সাহসী এবং ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। বাঙালি পেয়েছে স্বাধীন রাষ্ট্র, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সংগীত।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু যখন সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী চক্র জাতির পিতাকে হত্যা করে। এর মধ্য দিয়ে তারা বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস চালায়। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের  রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে ফেলাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য।’

তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর থেকেই এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত স্বাধীনতাবিরোধী চক্র হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়।’

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী সময়ের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করে। দূতাবাসে চাকরি দেয়। স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের নাগরিকত্ব দেয়। রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার করে। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে পুনর্বাসিত করে। পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকারও একই পথ অনুসরণ করে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের খুন, হত্যা, দুর্নীতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশের জনগণ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে পূর্ববর্তী সরকারগুলোর রেখে যাওয়া অচলাবস্থা এবং বিশ্বমন্দা কাটিয়ে আমরা দেশকে দৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে কাজ শুরু করি। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে সাত বছরে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী উন্নয়ন, সামাজিক  নিরাপত্তা, গ্রামীণ  উন্নয়ন, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, বৈদেশিক সম্পর্কসহ প্রতিটি সেক্টরে আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছি।’ উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৬৬ ডলার। রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ। আমি আশা করি, ২০২১ সালের আগেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতে সক্ষম হবো।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করেছি। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধীদের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচার কাজ চলছে। আমরা গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে সমুন্নত রেখেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু একাত্তরের পরাজিত শক্তি এখনো দেশ ও জাতির অব্যাহত অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে বিভিন্ন অপকৌশলে লিপ্ত রয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ দেশের মাটিতে কোনো জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ঠাঁই হবে না। জঙ্গিবাদকে সমূলে উপড়ে ফেলে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত করব- এই হোক জাতীয় শোক দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।’

সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের এই সদস্য বলেন, ‘ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। আসুন, আমরা জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করি। তাঁর ত্যাগ ও তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ ধারণ করে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করি। আমরা অবশ্যই জয়ী হবো।’

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031