তিন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে জিম্মি করেছিলেন আলোচিত কথিত মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা । জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা। মডেল পিয়াসা ও মৌ এভাবেই প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের জিম্মি করে অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নিতেন। অবৈধ সেই অর্থে বিলাসী জীবনযাপন করতেন আলোচিত-সমালোচিত এ দুই মডেল। পিয়াসা ও মৌকে জিজ্ঞাবাসাবাদ করে এমন তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবি পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে মুখ খুলতে শুরু করেছেন পিয়াসা ও মৌ। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কীভাবে জিম্মি করতেন তার বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছেন তারা। এ ছাড়া কোন কৌশলে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের বাসায় নিতেন তারও বর্ণনা দিয়েছেন তারা। মাদক ব্যসার সঙ্গেও এ দুই মডেলের জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ পাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে জিম্মি করা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম এ মুহূর্তে জানাতে চায়নি ডিবি পুলিশ। মূলত বিলাসী জীবনযাপনের জন্য এসব অনৈতিক ও অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন পিয়াসা ও মৌ।
সূত্র জানায়, পিয়াসা ও মৌয়ের বাসায় পাওয়া বিদেশি মদ, ইয়াবা ও সিসার উৎস এবং ক্রেতাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ডিবি পুলিশ। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে তারা। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই সবকিছু জানাতে চায়নি পুলিশ।
ডিবি সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে পিয়াসা জানিয়েছে, তার বারিধারার আলিশান ফ্ল্যাটটির মাসিক ভাড়া দেন দুই লাখ টাকার বেশি। ওই বাসায় তিনি একাই থাকতেন। ওই বাসায় নিয়মিত আসর বসাতেন। সেই আসরে যেতেন সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। সেখানেই সুযোগ বুঝে তুলে রাখা হতো তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি। পরে সেই ছবি পাঠিয়ে তাদের জিম্মি করতেন পিয়াসা চক্রের সদস্যরা।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন-অর-রশীদ আমাদের সময়কে বলেন, এ ধরনের ব্লাকমেইলের সঙ্গে জড়িত অন্যদের বিষয়েও অনুসন্ধান করছে ডিবি পুলিশ। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত রবিবার রাত ১০টার দিকে প্রথমে রাজধানীর বারিধারায় মডেল পিয়াসার বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। রাত পৌনে ১২টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর পিয়াসার দেওয়া তথ্যে মডেল মরিয়ম আক্তার মৌকে ধরতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। তার বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণ মদ উদ্ধার করা হয়। পরে রাত ১টার দিকে মৌকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর সোমবার দুপুরে গুলশান থানায় পিয়াসার বিরুদ্ধে ও মোহাম্মদপুর থানায় মৌয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে পুলিশ। এ দুই মামলায় তিন দিন করে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন পিয়াসা ও মৌ।
এর আগে ২০১৭ সালের মে মাসে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে নাম ছিল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসার। প্রথমে মামলা করতে ভুক্তভোগীদের সহযোগিতা করেছিলেন পিয়াসা। কিন্তু পরে সেই পিয়াসার বিরুদ্ধেই আবার মামলা তুলে নেওয়ার হুমকির অভিযোগে জিডি করেছিলেন ভুক্তভোগীদের একজন। চার বছর পর আবারও আলোচনায় সেই পিয়াসা।