২ হাজার ১০৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়ার অভিযোগে কঠোর লকডাউনের প্রথম চার দিনে । ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে ৯২৭ জনকে। এছাড়া সড়ক পরিবহন আইনে ১ হাজার ৮৪৪টি গাড়িতে মামলা দিয়ে জরিমানা করা হয়েছে ৪২ লাখ ১২ হাজার ১০০ টাকা।
পুলিশ বিনা প্রয়োজনে বের হওয়ার কারণে গ্রেপ্তারের কথা বললেও এ ব্যাপারে ভিন্ন ভাষ্য পাওয়া গেছে ঢাকার নিম্ন আদালতে কর্মরত আইনজীবীদের কাছ থেকে। তবে তারা এটাও জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার প্রায় সবাই জরিমানা দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন।
যাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাদের সিংহভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ, বলছেন নিম্ন আদালতের একজন আইনজীবী রতন মিয়া। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ডিএমপি অধ্যাদেশের ৬৯, ৭৫, ৭৭ বা ৭৮ ধারা অনুযায়ী অধিকাংশ মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এই ধারাগুলোতে ‘বিধি-নিষেধের বিপরীতে পণ্য বিক্রি করা’, ‘জনসম্মুখে অশোভন আচরণ’, ‘রাস্তায় পথচারীদের বিরক্ত করা’ এবং ‘শান্তি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে অসদাচরণ’এর শাস্তি হিসেবে জেল ও জরিমানার উল্লেখ রয়েছে।
আইনজীবী রতন মিয়া বলেন, “গত কয়েকদিনে শাস্তি পাওয়াদের অধিকাংশই দিনমজুর, চায়ের দোকানদার, সবজি বিক্রেতা – অর্থাৎ দিন আনে দিন খায় এমন।” “তাদের অনেকেই বলেছেন যে তাদের পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে বের হতে হয়েছে বাড়ি থেকে। কারো কারো অভিযোগ, তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করার পরও পুলিশ তাদের আটক করেছে।”
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ইফতেখায়রুল ইসলাম অবশ্য মনে করেন না যে নিম্ন আয়ের মানুষ পুলিশের ধরপাকড়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন।
তিনি গতকাল বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আজকেও ঢাকায় একশোর বেশি গাড়িকে জরিমানা করা হয়েছে। শুধু নিম্নবিত্তরাই যদি ভুক্তভোগী হত তাহলে এত ব্যক্তিগত গাড়িকে জরিমানা করা হত না।” যথাযথ কারণ ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া ব্যক্তিদের সবাইকেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শাস্তির আওতায় আনছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আটককৃতদের যা শাস্তি দেয়া হচ্ছে
লকডাউনের মধ্যে অযৌক্তিক কারণে ঘুরাফেরা করতে থাকা অনেক ব্যক্তিও পুলিশের শাস্তির আওতায় পড়ে আদালতে এসেছেন বলে জানান আইনজীবী রতন মিয়া।
আটক ও গ্রেফতার হওয়াদের আত্মীয়-স্বজনরা আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করায় গত কয়েকদিন আদালত এলাকায় স্বাভাবিকের তুলনায় জনসমাগম ছিল বেশি।
পুলিশ কর্মকর্তা ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, “গ্রেফতারকৃতদের ফৌজদারী দণ্ডবিধির ২৬৯ ধারায় অথবা ডিএমপি অধ্যাদেশ অনুযায়ী সাজা দেয়া হচ্ছে।”
দণ্ডবিধির ২৬৯ ধারায় বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি বেআইনিভাবে বা অবহেলাজনিত এমন কোন কাজ করে যার কারণে জীবন বিপন্নকারী কোন রোগের সংক্রমণ বিস্তার লাভের সম্ভাবনা রয়েছে তাকে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দেয়া হতে পারে, জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডই হতে পারে।”
আর ডিএমপি অধ্যাদেশের যেসব ধারার অধীনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আভিযোগ আনা হচ্ছে, সেসব ধারার অধীনে সর্বোচ্চ শাস্তি ৩ মাসের কারাদণ্ড এবং দুই থেকে পাঁচশো টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে।
আটককৃতদের অনেককে ঘটনাস্থলে উপস্থিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানা করছেন, সেসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় অভিযুক্তদের আদালতে উপস্থিত হতে হচ্ছে না।
মি ইসলাম বলেন, “নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকলে ঘটনাস্থলেই জরিমানা করে ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়া সম্ভব হয়।
সেরকম না হলে আমরা অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠাই। পরে আদালত সিদ্ধান্ত নেন যে তকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে, জরিমানা করা হবে না কারাগারে পাঠানো হবে।”
আইনজীবী রতন মিয়া জানান আটককৃতদের আদালতে পেশ করার পর অধিকাংশকেই অর্থদণ্ড দেয়া হচ্ছে। আর জরিমানার টাকা দেয়ার পর সাথে সাথেই তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
“খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিকেই জরিমানা অনাদায়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জরিমানা শোধ করার পর আদালত থেকেই অভিযুক্তদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে,” বলেন তিনি।