অসংখ্য মানুষের ভিড়। রাস্তায় বিপুল সংখ্যক রিকশা। সোমবার সকাল নয়টা। শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড।প্রাইভেট কারের আধিক্য। সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংখ্যা কম। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলও খুব একটা নেই। বাস বা অন্য কোনো গণপরিবহনতো নেইই।
আপনাদের তো এরইমধ্যে জানা হয়ে গেছে, আজ অফিস আদালত যথারীতি খোলা।
তো এই বিপুল সংখ্যক মানুষ তারা যাবেন কীভাবে? কিন্তু এ প্রশ্ন আপনি কাকে করবেন? করোনা বিরোধী লড়াইয়ে লকডাউনসহ প্রায় সব সিদ্ধান্তই আমরা জানতে পারছি আমলাদের কাছ থেকে। তাদের মেধা নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু এই মেধাবী আমলাদের আপনি প্রশ্ন করবেন সে সুযোগ কোথায়?
আরও একবার রাস্তা থেকে ঘুরে আসি। তো লোকজন কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছেন কিভাবে? যাদের প্রাইভেট কার আছে তাদের কোনো সমস্যা নেই। এবং আশা করা যায় বিত্তবানরা এক্ষেত্রে সমস্যামুক্ত। বড় বড় সরকারি আমলাদের কোনো সমস্যা নেই। অন্য সরকারি চাকরিজীবীদের বেশিরভাগেরই অফিস কর্তৃক পরিবহনের ব্যবস্থা আছে। কিছু কিছু বেসরকারি অফিসেরও একই ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এর বাইরে বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য দিনটি রীতিমতো লড়াইয়ের। রিকশাচালকরা অবশ্য খুশি। তারা ভাড়া হাঁকাচ্ছেন অনেক বেশি। তাও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও দেখা মেলে না একটা খালি রিকশার। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেক মধ্য বয়স্ক মানুষকেও দেখলাম দীর্ঘপথ হাঁটছেন। কেউ আবার ভ্যানে করে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউবা কোনো কোম্পানির গাড়ি থামিয়ে আকুতি করছেন একটু পৌঁছে দেয়ার জন্য।
আমরা যারা জনগণ তাদের আসলে এই নগরীতে আকুতি করা ছাড়া আর কিইবা করা আছে। যারা বিপুল বিত্তবান তারা ছাড়া, সবারই তো এখন এ শহরে টেকা দায়। তো কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, তুমি এ শহরে পড়ে আছো কেন? কে তোমাকে অনুরোধ করেছে এ শহরে থাকতে? দেখো না করোনার ধাক্কায় কত মানুষ ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন তো তুমি বসে আছো কেন?
দেখো না টিভিতে, প্রেস ব্রিফিংয়ে বড় বড় মানুষেরা বলেন, সব দোষ জনগণের। তারা লকডাউন মানেন না! তারা স্বাস্থ্যবিধি মানে না। তারা টিকাও দেয় না সেটা অবশ্য এখন আর বলতে পারছেন না। যে ১৪ লাখের বেশি মানুষ প্রথম ডোজ টিকা নিয়ে দ্বিতীয় ডোজ পাননি তারা কাদের কাছে জবাব চাইবেন? জবাব, সেটা আবার কি!
সর্বশেষ শুক্রবার থেকে লকডাউন নিয়ে কত রকম সিদ্ধান্তই না হয়ে গেলো? কাদের জন্য এসব সিদ্ধান্ত? নিশ্চয় জনগণকে সুরক্ষা দেয়ায় জন্য! কিন্তু সে জনগণের ভালো মন্দ না ভেবে, তাদের ঘরে চাল-ডাল আছে কি-না সেটা না চিন্তা করে শুধু প্রজ্ঞাপন জারি করে দিলেই সব মিটমাট হয়ে যায় না। এই দুঃসহ দিনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভালোবাসা আর প্রজ্ঞার।