ঢাকা : বিভিন্ন সময়ে সমন জারি হলেও সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচারকাজে গতি আসছে না। সড়ক দুর্ঘটনায় বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিশুক মুনীর নিহতের পাঁচ বছর আজ। এখন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ মামলার সাক্ষীদের অর্ধেকেরই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়নি।
মানিকগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সদস্য আজাহারুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, এই মামলায় ৩৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। সাক্ষীদের তালিকা দীর্ঘ হওয়ায় এবং আদালতে তাদের গরহাজিরের কারণে বিচারকাজে গতি পাচ্ছে না।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শালজানা গ্রামে ‘কাগজের ফুল’ চলচ্চিত্রের শুটিং স্পট দেখে ঢাকায় ফিরছিলেন তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ তাদের সহযাত্রীরা। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গাগামী চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হন। নিহত অপর তিনজন হলেন প্রোডাকশন সহকারী মোতাহার হোসেন, কর্মী জামাল হোসেন ও মাইক্রোবাসের চালক মোস্তাফিজুর রহমান।
এ ঘটনায় ঘিওর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) লুৎফর রহমান বাদী হয়ে বাসের চালক জামির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফ-উল ইসলামকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। দুর্ঘটনার পরদিন (২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট) জামিরকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। একই বছরের ১৭ নভেম্বর তিনি আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২১ মার্চ মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে বাসের চালক জামিরের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, সাধারণ জখম, গুরুতর জখম, অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু ঘটানো এবং মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। ওই বছরের ১০ অক্টোবর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলা বিচারকাজ শুরু হয়। এরপর ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি মামলাটি মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। ওই দিনসহ বিভিন্ন সময় সাক্ষ্যগ্রহণ শুনানিতে সাক্ষীরা গরহাজির থাকেন।
মামলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা জেলা দায়রা ও জজ আদালতের সহকারী সরকারি কৌসুলি (এপিপি) আফছারুল ইসলামকে সহযোগিতা করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী খান খালিদ আদনান। তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, মামলায় সহযোগী দুর্ঘটনার সময় চালক জামিরের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। তিনি লাইসেন্স বর্ধিতকরণ আবেদনের ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এ ছাড়া চলতি বছরের ১৭ মে আদালতে সাক্ষ্য দেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) তৎকালীন সহকারী পরিচালক (প্রকৌশল) আবদুল সাত্তার। ওই দিন আদালতে দেয়া বিআরটিএ-র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাসটির গতিনিয়ন্ত্রক যন্ত্রে কারসাজি (টেম্পার্ড) করা হয়েছিল।
গত বৃহস্পতিবার সহকারী সরকারি কৌসুলি (এপিপি) আফছারুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, মামলার কার্যক্রম প্রায় পাঁচ বছর হলেও ৩৯ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমন জারি করা হলেও সাক্ষীরা যথাসময়ে আদালতে হাজির হন না। ১৪ আগস্ট রবিবার মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। এ দিন আদালতে উপস্থিত থেকে সাক্ষ্যশুনানিতে অংশ নেয়ার জন্য পাঁচজনের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়েছে। সাক্ষীরা আদালতে এলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে যাবে বলে মনে করেন মামলাটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রধান এই ব্যক্তি।