ঢাকা : স্যার হিসেবেই পরিচিত শিক্ষার্থীদের কাছে। তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা। দায়িত্ব, ব্যস্ততা অনেক। এর মধ্যেই শিক্ষার্থীদের জ্ঞানদানের কাজটি করেন তিনি। এই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মুহাম্মদ ইউছুফ। পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টে পরিদর্শক হিসেবে কাজ করছেন। তার অনেক শিক্ষার্থী কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে মেধার লড়াইয়ে। তাদের মধ্যে রয়েছে তিতুমীর কলেজের ছাত্র সজল, সিদ্ধেশ্বরী কলেজের এ্যানি, বিজ্ঞান কলেজের ছাত্র হৃদয় মাহমুদ, বাবু, শিউলি, সুমি। পুলিশের কর্মকর্তা হয়েও শিক্ষকতা করার পেছনের কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, শিক্ষকতার বিনিময়ে তিনি কোনো অর্থ নেন না। গরিব মেধাবী শিক্ষার্থী যাদের কোচিং করা বা গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া প্রায় অসম্ভব তাদের পাশে দাঁড়ান পুলিশের এই পরিদর্শক। মানুষের উপকার-সেবা করাই তার উদ্দেশ্য। মেধাবী ছাত্র হৃদয়ের পিতা একটি সাধারণ লন্ড্রি দোকান দিয়ে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করেন। তাদের বাসা শান্তিবাগে। তার এক ছাত্রীর মাধ্যমেই হৃদয়ের সন্ধান পান। শিউলি নামের মাধ্যমিকের ওই ছাত্রীকে দীর্ঘদিন পড়িয়েছেন তিনি। শিউলি বলেছিল, স্যার- আমার ফুফাতো ভাই হৃদয় খুব ভালো ছাত্র। কিন্তু আমাদের মতোই গরিব। আপনি পড়ালে খুব উপকার হতো। একইভাবে হৃদয়ের বাবাও তাকে অনুরোধ করেন। হৃদয়কে দীর্ঘদিন পড়িয়েছেন তিনি। অষ্টম শ্রেণি থেকে এসএসসি পর্যন্ত। দুটি পরীক্ষাতেই জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে এই ছাত্র। এজন্য হৃদয়ের বাবার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তার সরল উক্তি, স্যার, আপনার জন্য দুইহাত তোলে দোয়া করি। আল্লাহ আপনাকে অনেক বড় করুক।
শুধু হৃদয় বা শিউলি না। এরকম ছাত্রের সংখ্যা অনেক। শান্তিনগর, মালিবাগ এলাকাতেই এই মহৎ কাজটি করা সম্ভব হচ্ছে তার। কারণ সিআইডি অফিস ও আবাসস্থল এখানেই। নানা মামলা, তদন্ত, মিটিং এতসবের মধ্যে কীভাবে সময় পান পড়ানোর? মুহাম্মদ ইউছুফ জানান, সন্ধ্যার পর অফিসের কাজ শেষে তেমন কোথাও আড্ডা দিতে যাই না। ওই সময়টা কাজে লাগাই। তবে সময় বেঁধে পড়ানো তার পক্ষে সম্ভব হয় না। ইউছুফ বলেন, যতদিন সম্ভব হয় ততদিন পড়াবেন। ইংরেজি ও বিজ্ঞানে তার রয়েছে বেশ দখল। বিদেশ থেকে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা এলে সিআইডি’র সিনিয়র কর্মকর্তারা ডেকে নেন তাকে। ভালো ইংরেজি জানা পরিদর্শক হিসেবে তার সুনাম রয়েছে পুলিশের এই বিভাগে। ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স, মাস্টার্স করেছেন। তার আগে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টার মেডিয়েট কলেজ থেকে ৮৫০ নম্বর পেয়ে বোর্ডে স্ট্যান্ড করেন এইচএসসিতে। একইভাবে ১৯৯৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ময়মনসিংহ ল্যাব হাই স্কুল থেকে ৮৫৪ নম্বর পেয়ে স্ট্যান্ড করেন। ২০০২ সালে অনার্স সম্পন্নের আগেই এসআই পদে পরীক্ষা দেন তিনি। ২০০৪ সালে পুলিশে যোগদান করেন। মধ্যখানে অনার্স শেষ করেন। অনার্স শেষ করে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন জামালপুরের জিন্নাতুন আফসার মহিলা কলেজে। এর মধ্যেই শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে পুলিশে যোগ দেন। পিএসআই হিসেবে দুই বছর ছিলেন কিশোরগঞ্জে। এই সুযোগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন মুহাম্মদ ইউছুফ। এসবি থেকে পিবিআই। গত বছরের ১২ই আগস্ট থেকে সিআইডিতে। গত বছরের ৫ই আগস্ট পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি।
সরলভাবে জানান, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখানে আসতে হয়েছে তাকে। কলেজ জীবনে বিএনসিসি করতেন। ভালো ফুটবল-ক্রিকেট খেলতেন। ছাত্রজীবন থেকেই পড়াতেন তিনি। তার শিক্ষার্থী অনেকে বিসিএস ক্যাডার হয়ে চাকরিতে যোগদান করেছেন। গরিবদের ক্ষেত্রে তখন থেকেই আর্থিক বিনিময় ছাড়াই শিক্ষা দিতেন। এখন পেশাদার শিক্ষক না হলেও গরিব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে চেষ্টা করেন। মানুষের সেবা করাই তার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা ইউছুফ। ১৯৮১ সালের ২রা আগস্ট তার জন্ম। ময়মনসিংহ সদরের ঢোলাদিয়া তালতলা বাজারের হাজী মো. ইব্রাহিম ও ছালেহা ইব্রাহিমের পুত্র মুহাম্মদ ইউছুফের ডাক নাম পিন্টু। স্ত্রী সানিয়া বাকিয়া বিল্লাহ ও সন্তান হুসনা বিনতে ইউসুফ (ইসমাত)’কে নিয়েই তার সংসার।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |