দুর্নীতি দমন কমিশন নিয়ামুনযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করার কথা থাকলেও ৮০ ভাগ অনুসন্ধানই সময়মতো শেষ করতে পারছে না । সম্প্রতি সংস্থাটির নিজস্ব মূল্যায়নে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এই মূল্যায়নের প্রেক্ষিতে সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করতে কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে দুদকের পক্ষ থেকে। অনুসন্ধানগুলোর কার্যক্রম কর্মকর্তাদের মধ্যে পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও অনুসন্ধানের সময়সীমা আরো বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তা করছে দুদক। এজন্য বিধিমালা সংশোধনের উদ্দেশ্যে একটি কমিটিও গঠন করেছে সংস্থাটি। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের নামে গ্রাহকদের ১ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগে ১৭টি বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ছে গত ২১শে জুন। বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী, ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে এই অনুসন্ধান শেষ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রায় দুই মাসের মতো সময় পার হতে চললেও অনুসন্ধান কার্যক্রমের এখনও কিনারা করতে পারেনি সংস্থাটি। এ ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হওয়া বেশকিছু অভিযোগের অনুসন্ধানের সময়সীমা শেষ হলেও এখনও অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষ হয়নি। পূর্বে হলমার্ক, পদ্মা সেতু, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, ডেসটিনি ও রেলওয়ে নিয়োগের দুর্নীতিসহ বেশির ভাগের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করা যায়নি এর কোনোটির অনুসন্ধান। মাসের পর মাস লেগেছে। তবুও অনুসন্ধান শেষ হয়নি। অনুসন্ধানের এই ধীর গতির ফলে বিচার প্রক্রিয়ায়ও এর প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। দুদকের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা হারানোরও অন্যতম কারণ এটি। দুদক কর্মকর্তারা মনে করেন, সময়মতো অনুসন্ধান শেষ করতে না পারার কারণে দীর্ঘমেয়াদি বিচার প্রক্রিয়ায় ফাঁদে পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। দুদকের পাঁচ বছর মেয়াদি কৌশলগত কর্ম পরিকল্পনাপত্রের ‘কার্যকর অনুসন্ধান ও তদন্ত’ শীর্ষক ৪ এর ১ অধ্যায়ে সমস্যা ও কারণের বিষয়ে বলা হয়েছে, দুদকের অভিযোগ যাচাই-বাছাই পদ্ধতি বেশ দীর্ঘ। তা অনুসন্ধানের জন্য বিবেচনার অনুমোদন পেতে প্রায়ই দীর্ঘ সময় লাগে। ফলে অভিযোগকারীগণ হতাশ হয়ে পড়েন এবং প্রমাণ নস্যাৎ হয়ে যায়। অধিকন্তু দাখিলকৃত দুর্নীতির প্রতিটা অভিযোগ অনুসন্ধান পর্যায়ে শুরু হয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে অভিযোগের পক্ষে প্রয়োজনীয় প্রমাণ প্রতিষ্ঠা করা। অনুসন্ধান ৩০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে এটা সম্ভব হয় না। তাই এ সময়সীমা বৃদ্ধি করা জরুরি। সমস্যা ও কারণ হিসেবে কৌশলপত্রে আরো বলা হয়েছে, এ ধরনের চর্চার প্রচলন হয়েছে যে, অনুসন্ধান পর্যায়ে যে সকল প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়, তদন্ত পর্যায়ে তা ব্যবহার না করে পুনরায় একই প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়। অনুসন্ধান পর্যায়ে বক্তব্য প্রদানকারী সাক্ষীদের তদন্ত পর্যায়ে পুনরায় এসে জবানবন্দি প্রদান করতে হয়, আদালতে তা উপস্থাপনার্থে। উভয়ক্ষেত্রেই সময়সীমা অত্যন্ত সীমিত। কৌশলপত্রে আরো বলা হয়, দুদকের মধ্যে কোনো পেশাদার নজরদারি সক্ষমতা নেই। বিশেষ উদ্দেশে তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ কর্তৃক মাঝে মাঝে অপরিকল্পিতভাবে নজরদারি পরিচালিত হয়। কিন্তু এসব কর্মকর্তা যথাযথভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন এবং কার্যকর এবং নিরাপদ নজরদারি কর্মকর্তা হতে তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব আছে। এক্ষেত্রে দুদকের ‘কার্যক্রম’ শীর্ষক ৪ এর ২ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, এর থেকে উত্তরণের জন্য কিছু বিষয় মোকাবিলা করা হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- একটি গোয়েন্দা শাখা গঠন করা। যা প্রয়োজনীয় তথ্য এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহে কারিগরি সহযোগিতা দিবে। অনুসন্ধানকারী/তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জন্য দুদক বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। যাতে তারা সাক্ষীদের আস্থা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। এবং সাক্ষীরা আরো কার্যকরভাবে দুদকের নিকট তথ্য সহযোগিতা প্রদান করে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ক্ষেপণকারী অভিযোগ যাচাইয়ের বর্তমান পদ্ধতি পরিমার্জন করে নতুন পদ্ধতি প্রচলন এবং প্রয়োগের মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণ ও প্রক্রিয়াভুক্ত করবে। অনুসন্ধানের এই ধীর গতির বিষয়ে দুদক সচিব মুস্তফা কামাল মানবজমিনকে বলেন, আমরা তাগিদের পর তাগিদ দিচ্ছি, যেন সময়মতো অনুসন্ধান শেষ হয়ে যায়। এ ছাড়া অনুসন্ধানের কার্যক্রমের সুষম বণ্টনের বিষয়েও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, যেসব কর্মকর্তার কাছে অনুসন্ধান বেশি জমে গেছে, তাদের কাছ থেকে তা নিয়ে নেয়া হচ্ছে। এবং যাদের কাছে অনুসন্ধানের কাজ কম, বাড়তিগুলো তাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। যেন পুরো বিষয়টা ব্যালেন্সের মধ্যে চলে আসে।
অনুসন্ধানের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময়সীমা বিধিমালা দিয়ে ঠিক করা আছে। নতুন আইনের সঙ্গে বিধিমালা সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্ট পেলে বলা যাবে সময়সীমা বাড়ানো যাবে কিনা।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |