তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার সতর্কবার্তা শোনাচ্ছেন তারা। বলছেন, সংক্রমণ একইভাবে চলছে। প্রকৃত পক্ষে রোগী কমেনি। কয়েকগুণ রোগী অ-শনাক্ত থেকে যাচ্ছে। পরীক্ষা বাড়াতে হবে।করোনার সংক্রমণ থামেনি। এরমধ্যেই দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা বাড়ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শেষে এখন তৃতীয় ঢেউ নিয়ে শঙ্কা দেখছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

সিটি করপোরেশন এলাকায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র বসাতে হবে। স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ তৈরি করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি জোর দিতে হবে। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রতিবেশী দেশ থেকে করোনার পরিস্থিতি বিষয়ে শিক্ষা নিতে হবে আমাদের। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজেও প্রাণঘাতী মহামারি করোনার ‘তৃতীয় ঢেউয়ের’ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

সরকারি হিসাব মতে, দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। শনাক্তের সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ। দেশে গত বছরের ৮ই মার্চ প্রথম করোনা শনাক্ত হয় আর প্রথম মৃত্যু ১৮ই মার্চে। প্রথম থেকেই করোনার থাবা ঢাকাতে। হটস্পট ছিল রাজধানী। দিনে দিনে সারা দেশে ছড়ালেও রাজধানীতেই অর্ধেকের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো শিথিল হওয়ায় রাজধানীতে দ্বিতীয়বারও সংক্রমণ বাড়ে। প্রথম থেকেই সিটি করপোরেশনগুলোতে করোনার সংক্রমণ বেশি। তাই বিশেষজ্ঞরা সিটি করপোরেশন এলাকায় বেশি জোর দিতে তাগিদ দিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মত, মানুষের মধ্যে সর্বজনীনভাবে মাস্ক ব্যবহার, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়ার অভ্যাস বাড়ানো এবং পরীক্ষা ও আইসোলেশনের মতো স্বাস্থ্যবিধির কঠোর প্রয়োগের ওপর এ রোগের বিস্তার অনেকটা নির্ভর করবে। তাই সেদিকে নজর দিতে হবে। নন মেডিকেল লকডাউন দিয়ে কিছুই হবে না।
এমন পরিস্থিতিতে আরো বেশি সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির অন্যতম সদস্য, দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, মানুষ যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ঈদে বাড়ি গেল এতে করোনার সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

গতি কোন্‌ দিকে মোড় নেয় এজন্য আরো দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, মাস্ক পরতে হবে। দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে হবে। হাঁচি, কাশি হলে রুমাল বা কুনুই ব্যবহার করতে হবে। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, শুরু থেকে করোনার সংক্রমণ রাজধানীসহ সিটি করপোরেশনগুলোতে বেশি। সিটি করপোরেশনগুলোতে জোর দিতে হবে। এজন্য সিটি করপোরেশন এলাকার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। পরীক্ষার পরিমাণ বাড়াতে হবে। যারা শনাক্ত হবেন তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে আইসোলেশন করতে হবে। আরো আইসোলেশন সেন্টার এবং স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ তৈরি করতে হবে। সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

নন-মেডিকেল লকডাউন দিয়ে কিছুই হবে না। অধ্যাপক নজরুল বলেন, কার্যকর প্রোগ্রামের মাধ্যমে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করতে হবে। লুকিয়ে থাকা করোনা রোগীদের শনাক্ত করতে ও আক্রান্তদের আইসোলেশনের মধ্যে সংক্রমণের মাত্রাকে ধীর করতে নমুনা পরীক্ষা করা উচিত। ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধির নিয়ম বজায় রেখে জনগণকেও সরকারের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা দরকার।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন এ ব্যাপারে  বলেন, সংক্রমণ আবার বাড়বে। এটাই আমাদের শঙ্কা। যেভাবে দোকানপাটে, শপিং মলে ঈদের কেনাকাটা হয়েছে এবং দলে দলে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে বাড়ি গিয়েছেন তাতে সংক্রমণ বাড়বে। তিনি বলেন, এখন যারা শনাক্ত হবেন তাদেরকে আইসোলেশন করে চিকিৎসা দিতে হবে। সংক্রমণের উৎস বন্ধ করতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি জোর দিতে হবে। ভারত থেকে আসলে সঙ্গে সঙ্গে আইসোলেশন করতে হবে। না হলে আমাদেরও ভারতের মতো বিপদ হতে পারে।
সম্প্রতি জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উপলক্ষে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রাণঘাতী মহামারি করোনার ‘তৃতীয় ঢেউয়ের’ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে এই তৃতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়তে হবে দেশকে। বারবার এমন পরিস্থিতি হলে সামাল দেয়া সম্ভব হবে না।

দেশের মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বেখেয়ালিপনা আর অসতর্কতার কারণে দেশে দ্বিতীয়বার করোনা সংক্রমণ বেড়েছে বলে দায়ী করেন। অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা কতো চিকিৎসা দেবো? কতো বেড, কতো হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা বাড়াবো? কতো অক্সিজেনের ব্যবস্থা করবো? হাসপাতাল ও হাসপাতালের বেড রাতারাতি বাড়ানো যায় না। তারপরও আমরা আড়াই হাজার বেড থেকে ৭ থেকে ৮ হাজার বেডে উন্নীত করেছি। এর কারণে দশগুণ রোগীও সামাল দিতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু বারবার এটা সম্ভব হবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই যে আমরা ঘোরাঘুরি করি বেসামালভাবে।

আমরা বিভিন্ন জায়গায় গেলাম, মাস্ক পরলাম না, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলাম না। এই কারণে দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে। একই কাজ যদি আমরা আবার করি তাহলে তৃতীয় ঢেউ আবার আসবে। তখন আর সামাল দেয়া সম্ভব হবে না।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031