স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “তাকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। হি মাস্ট এক্সপ্লেইন, পরিষ্কার কথা।”
বুধবার চট্টগ্রামে এক সভায় নাছির বলেন, ‘দাবি মত’ কর্মকর্তাদের ঘুষ দিলে যেখানে ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যেত, সেখানে তা না দেওয়ায় এসেছে মাত্র ৮০ কোটি টাকা।
“আমাকে বলা হল- করপোরেশনের জন্য যত টাকা চাই দেওয়া হবে থোক বরাদ্দ হিসেবে, তবে তার জন্য পাঁচ শতাংশ করে দিতে হবে।”
সাম্প্রতিক এক ঘটনা তুলে ধরে মেয়র ওই অনুষ্ঠানে বলেন, যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা সিটি করপোরেশনের প্রকল্প পাস করার জন্য একটি নতুন পাজেরো গাড়ি চেয়েছিলেন।
নাছিরকে ওই অভিযোগের ‘প্রমাণ দিতে হবে’- এমন মন্তব্য করে স্থানীয় সরকার সচিব সাংবাদিকদের বলেন, “তার কথা তিনি যা বলেছেন, আমরা তার কাছে জানতে চাইব, প্রমাণ চাইব। তিনি প্রমাণ দেবেন যে মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তা তার কাছে জিপ চেয়েছেন। তিনি যার কথাই বলুক, সেটা উনি বলুক।
“উনি যে কথাগুলো বলেছেন, উনি একজন রাজনৈতিক নেতা এবং একজন মেয়র… সুতরাং উনার বক্তব্য উনিই স্যাটেল করুক। আমরা আজকেই (বৃহস্পতিবার) উনার কাছে ব্যাখ্যা চাচ্ছি।”
চিঠিতে যা বলা হয়েছে
“চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকল্প অনুমোদন এবং বরাদ্দ পেতে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘুষ চান; মন্ত্রণালয়ের জনৈক যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা আপনার কাছে একটি নতুন পাজেরো জিপ চেয়েছেন, ৫ শতাংশ ঘুষ দিলে আপনি ৮০ কোটির পরিবর্তে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেতেন ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ করে গত ১০ অগাস্ট চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মর্মে ১১ অগাস্ট বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে।
“আপনার আনীত এ অভিযোগসমূহ গুরুতর। এতে মন্ত্রণালয় তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে- যার প্রমাণ প্রদান আবশ্যক।
“এ পরিপ্রেক্ষিতে কোন কর্মকর্তা কোথায় কখন আপনার কাছে ঘুষ দাবি করেছেন, কে কোথায় কখন পাজেরো জিপ চেয়েছেন, কোন প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে কোন কর্মকর্তা জটিলতার সৃষ্টি করেছেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখপূর্বক উপযুক্ত প্রমাণ আগামী সাত দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।”
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন শাখার অতিরিক্ত সচিব জ্যেতির্ময় দত্ত।
এদিকে কোরবানির ঈদে নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই নিয়ে সিটি করপোরেশন ও কয়েকটি পৌরসভার প্রতিনিধিদের এক বৈঠকে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আসেন নাছির।
কর্মকর্তাদের ঘুষ দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার মত করে আমি বলব। আমি এসেছি কাজে, আমি মিটিংয়ে এসেছি। মিটিংয়ের পরে কিছু দাপ্তরিক কাজ ছিল, সেগুলো নিয়ে (সচিবের সঙ্গে) কথা বলেছি।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, “আমার কোনো প্রজেক্টে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি, আমি এটা বলতে পারি। উনি (মেয়র নাছির) যেহেতু অভিযোগ করেছেন উনিই এ ব্যাপারে বলতে পারবেন।”
আইভী বলেন, “আমার প্রজেক্টগুলো পাস হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে বরাদ্দও পাচ্ছি। তবে চাহিদার তুলনায় কম পাচ্ছি।… আমাকে কখনও পারসেনটেজ দিয়ে অথবা কেউ… বলতে সাহস পায়নি।”
চট্টগ্রামের মেয়রের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা উচিত বলেও মন্তব্য করেন আইভী।
নাছিরের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘ওই ধরনের কিছু’ তিনি শোনেননি।
“মিনিস্ট্রির কাজ ডেভেলপমেন্ট করানো। ডেভেলপমেন্ট করাতে হলে টাকা দেবে সরকার। মিনিস্ট্রি তো তার নিজস্ব ডেভেলপমেন্টের স্বার্থে সরকারের কাছে এ সব ডিপিপিগুলো পাঠাবে। আমাদের চেয়ে অনেক সময় উনাদের তাড়া বেশি থাকে।”