ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী সকালে রাজধানীতে আলেম ওলামাদের সংগঠন বাংলাদেশ জমিআতুল উলামা আয়োজিত উলামা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।উগ্রবাদে জড়িত বিভ্রান্ত তরুণদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইসলামের সঠিক শিক্ষা দিয়ে আলেম ওলামারাই এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে উদার ধর্ম ইসলাম। অথচ কিছু মানুষ ভুল পথে গিয়ে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে এই ধর্মকে হেয় করছে। অনেক সময় আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে বলা হয় ইসলাম সন্ত্রাসী ধর্ম। আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করেছি; বলেছি, কিছু মানুষের জন্য আপনারা পবিত্র ধর্মকে দোষ দিতে পারেন না। কিন্তু অন্যন্ত দুঃখের বিষয়, আজকে কিছু লোক এমনভাবে কতগুলো ঘটনা ঘটিয়েছে যে এখন সারা বিশ্বের মুসলমানরা প্রশ্নের সম্মুখীন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলাম ধর্মের সৃষ্টিই হল মানবতার জন্য। নবী করিম (সা.) সব সময় মানুষকে আশ্রয় দিয়েছেন। এখন সেই ইসলামকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যা দেখে আমি কষ্ট পাই।’

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন সংগঠনের জঙ্গি তৎপরতায় প্রাণ হারাচ্ছে হাজারো মানুষ। বাংলাদেশেও বিভিন্ন নামে জঙ্গিরা সন্ত্রাস করছে। ধর্মের নামে এই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি এক লাখ আলেমের সই সংগ্রহ করে ফতোয়া জারি করেছে জমিআতুল উলামা।

এই উদ্যোগের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ফতোয়া ধর্মের সুনাম রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। এর প্রচারে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগ নেবে।’

পবিত্র কোরআন শরিফের বিভিন্ন আয়াত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোরআনে বলা হয়েছে তোমরা সন্ত্রাস ও দুর্যোগ সৃষ্টি করো না। তারা (জঙ্গিগোষ্ঠী) এসব সৃষ্টি করে কার্যত কোরআনকেই অস্বীকার করছে। তারা নবী করিমের বাণীও মানছে না। তারা কীভাবে বেহেশতে যাবে?’

গত জুলাইয়ে গুলশানের রেস্টুরেস্ট হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। কদিন পর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে হামলার চেষ্টা করে আরেকটি গোষ্ঠী। জঙ্গিরা দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে।

এই ‍দুটি ঘটনায় জড়িত সাত তরুণ বেশ কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ ছিল। পরে জানা যায় আরও বেশ কিছু মানুষ উগ্রবাদে দীক্ষিত হয়ে ঘর ছেড়েছে। এদের কেউ কেউ বিদেশেও পারি জমিয়েছে।

এ বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে আলেমদের উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখান থেকে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার পথ কী? এই বিষয়টাই আপনাদেরকে চিন্তা করতে হবে। সঠিক শিক্ষাটা যেন তারা পায় সেই উদ্যোগ নিতে হবে আপনাদের।’

সারাদেশে জঙ্গিবিরোধী সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষদের নিয়ে কমিটি গঠন করে প্রচার চলছে। এই উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, `সারাদেশে এখন জঙ্গি ও সন্ত্রাবাদবিরোধী চেতনা তৈরি হয়েছে। একে আরও শানিত করা দরকার। আপনারা (আলেম-ওলামা) ধর্মের কথা বলেন, আপনারা আরও কার্যকরভাবে এই কাজ করতে পারবেন।…প্রতিটি জায়গায় কমিটি করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির কাজ চলছে। আপনারা প্রত্যেকে মিলেমিশে কাজ করুন।’

হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারীরা যাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে তাদেরকে কমান্ডো অভিযানের আগে বলেছিল, ‘আপনারা নিরাপদে চলে যান, আমরা বেহেশতে যাচ্ছি’।

এই বিষয়টির ‍উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আলেমদের ‍উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা সাধারণ মানুষকে আরও শিক্ষা দেন, এটা জঙ্গিবাদ, খুনখারাবির পথ, এটা ইসলামের পথ না।’

আর্টিজানে হামলাকারীদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোজার সময় তারা এশার নামাজ পড়তে গেলো না, গেল বিদেশি, নিরীহ মানুষদেরকে হত্যা করতে। এভাবে তারা ইসলাম কায়েম করলো?’

শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের অদূরে জঙ্গি হামলার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঈদের নামাজে না গিয়ে সেখানে পুলিশের ওপর হামলা করেছে, মানুষ খুন করার চেষ্টা করেছে। এভাবে মানুষ খুন করে তারা কী করতে চেয়েছিল?’

সারা দেশে হবে ইসলামী সাংস্কৃতিক শিক্ষা কেন্দ্র

ইসলামের সঠিক শিক্ষা প্রচারে দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে এই কেন্দ্র করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কেউ যেন ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তরুণদের বিপথে নিয়ে যেতে না পারে সে জন্য ইসলামের মূল বাণী শিক্ষা দেয়া হবে এখানে। সৌদি আরবের বাদশাহ এ ব্যাপাকে আর্থিক সহযোগিতা করবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মানুষের কাছে ইসলামের মূল বাণীটা পৌছে দিতে চাই যেন কেউ বিপথে না যায়।’

প্রস্তুতির কারণে ঠেকানো গেছে শোলাকিয়া হামলা

ঈদ উল ফিতরে দেশের সবচেয়ে বড় জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে আগে থেকেই শঙ্কা ছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার আগে থেকেই শঙ্কা ছিল। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দাদের সঙ্গে বৈঠক করি। বলেছি এখানে যেহেতু সবচেয়ে বড় জমায়েত হয়, ওদের কুনজর থাকতে পারে। এরপর পুরো ময়দানটি আইনশৃঙ্খরা বাহিনী নিরাপদে রাখে। আর ময়দানে ঢুকতে না পেরে ওরা চেকপোস্টের ওপর হামলা করে।’

জঙ্গি হামলা মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তারা জীবন দিয়ে অন্যের জীবন রক্ষা করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদমুক্ত দেশ গড়তে চাই। আমাদের দেশে সব ধর্মের মানুষ বাস করে। সবাই নিজ নিজ ধর্ম সম্মানের সঙ্গে পালন করবেন। এটা ইসলামের শিক্ষা, কোরআনের শিক্ষা। ধর্মের মর্যাদা কেউ যেন ক্ষুন্ন করতে না পারে।’

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031