আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানসনের ৬ তলার চিলেকোঠা থেকে দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন।
ফলে আগুন লাগার ঘটনায় নিহত বেড়ে দাঁড়াল ৪ জনে। নিহতরা হলেন- ওই ভবনের নিরাপত্তারক্ষী ওলিউল্লাহ, দোকান কর্মচারী রাসেল মিয়া, ভবনের চারতলার বাসিন্দা শিক্ষার্থী সুমাইয়া এবং বেড়াতে আসা রাসেলের আত্মীয় কবীর।
শুক্রবার ভোর রাত ০৩টা ১৮ মিনিটে পুরান ঢাকার ৯/১১ আরমানিটোলায় অবস্থিত হাজি মুসা ম্যানশন নামের ৬ তলা ভবনের নিচ তলায় কেমিক্যালের গোডাউনে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। সংবাদ পেয়ে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে অংশ নেয় সদরঘাট, সিদ্দিকবাজার, মোহাম্মদপুর ও খিলগাঁও ও সিদ্দিকবাজার সদর দপ্তর ফায়ার স্টেশন। হেড কোয়ার্টারের লাইটিং ইউনিট, টিটিএল, ক্রাউট কন্ট্রোল ইউনিট, অ্যাম্বুলেন্স, মিডিয়া সেলসহ বিভিন্ন ফায়ার স্টেশনের মোট ১৯টি ইউনিট অংশগ্রহণ করে। সকাল ৯টার পর প্রায় ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, ভবনটির নিচতলায় রাসায়নিকের গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
অগ্নিনির্বাপণের পাশাপাশি আহত অবস্থায় ১৪ জনকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে ঢাকা মিটফোর্ট হসপিটালে ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ভবনের নিরাপত্তা কর্মীর ১টি লাশ উদ্ধার করে বডি ব্যাগে সংরক্ষণ করে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়। বাকি একজন চিকিসাধীন অবস্থায় মিটফোর্ট হসপিটালে মারা যায়। ওই ভবনের ৩ তলা থেকে একটি পোষা টিয়া পাখি উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন, অপারেশনাল কাজে উপস্থিত হয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন এবং গণমাধ্যম থেকে আসা সংবাদকর্মীদের অগ্নিকান্ডের তথ্য ও আহত-নিহতদের উদ্ধারের বিষয়ে ব্রিফ করেন।
এদিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল জানান, ‘এ পর্যন্ত ২১ জন আসছে, তাদের সবার কেমিক্যালের ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। একজনকে আইসিইউতে পাঠানো হয়েছে।’ এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ৪ কর্মী আহত হয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ফজলুর রশিদ।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, আগুন লাগার পর পর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় ভবনের নিচতলা। ধীরে ধীরে ধোঁয়া উঠতে থাকে ওপরের দিকে। এতে ওপরের তলার বাসিন্দারা আগুনের বিষয়টি টের পান। এ সময় মানুষজন বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলেও ধোঁয়া ও আগুনের কারণে বের হতে পারেনি। তাঁরা ওপরের দিকে উঠতে থাকেন। তবে ভবনের ছাদ তালাবদ্ধ থাকায় কেউ ওপরে উঠতে পারেননি। বিভিন্ন ফ্লোরে আটকে থাকা লোকজন চিৎকার করতে থাকেন। আটকে পড়া বাসিন্দারা বারান্দা ও জানালা থেকে মোবাইলের আলো জ্বেলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। ভোর পৌনে ৫টার দিকে বিভিন্ন ফ্লোর থেকে অন্তত ১৩/১৪ জনকে ক্রেন ব্যবহার করে বের করে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তাঁরা বারান্দার গ্রিল কেটে বাসিন্দাদের উদ্ধার করেন। ভোর পাঁচটার দিকে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে একে একে আটকে পড়া সবাইকে উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।