রাতদিন সব সময় আমাকে কু-প্রস্তাব দিতো, জ্বালাতন করতো। ‘ওদের কু-নজর আমার ওপরও পড়েছিল। আমার জীবন বিষিয়ে উঠেছিল। এখন ওরা আমার স্কুলপড়ুয়া বোনের জীবনও বিষিয়ে তুলেছে। এমনকি রাতের আঁধারে তারা ধর্ষণেরও চেষ্টা করেছে। বিচার চাইতে গিয়ে এখন উল্টো আক্রমণের শিকার হচ্ছি।’ কথাগুলো সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাঘা ইউনিয়নের কালাকোনা গ্রামের তুলি রানী দেবের। গত ১৩ই এপ্রিল নির্মাণাধীন একটি মন্দিরের পুরোহিত পরেশ চৌহান ও তার সহযোগী দীপঙ্কর দেব তপন তার স্কুলপড়ুয়া বোনকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। ঘটনার পর পুলিশ পুরোহিত পরেশ চৌহানকে গ্রেপ্তার করলেও পলাতক রয়েছে তপন দেব। পলাতক থেকেই তপন ও তাদের সহযোগীরা মামলা তুলে নিতে দিচ্ছে হুমকি।
এমনকি বিষয়টিকে জমি সংক্রান্ত বিরোধ বলে দাবি করে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা চালাচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে গতকাল সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করেন তুলি রানী দেব। সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজেদের ইজ্জত রক্ষায় সাংবাদিকসহ সব মহলের সহযোগিতা কামনা করেন। লিখিত বক্তব্যে তুলি জানান- ‘পুরোহিত পরেশ চৌহান চরিত্রহীন ব্যক্তি। সে কয়েক বছর আগে সিলেট শহরতলীর মেজরটিলার দেবপাড়ার একটি মন্দিরে ছিল। সেখানে নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিতর্কিত হয়। পরবর্তীতে ওই মন্দির কর্তৃপক্ষ তাকে তাড়িয়ে দেয়। এরপর সে আশ্রয় নিয়েছিল গোলাপগঞ্জের বাঘা ইউনিয়নের কান্দিগাঁওয়ের একটি সার্বজনীন মন্দিরে। ওখানেও নারী ঘটিত ঘটনায় ধরা পড়লে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। কান্দিগাঁওয়ের মন্দিরে থাকার সময় পার্শ্ববর্তী কালাকোনার দীপঙ্কর দেব তপনের সঙ্গে সংখ্যতা গড়ে ওঠে পরেশ চৌহানের। কান্দিগাঁও থেকে বিতারিত হওয়ার পর পরেশ চৌহানের পরামর্শে তপন দেব ২০১৯ সালের আগষ্ট মাস থেকে মন্দির নির্মাণ শুরু করে। এই নির্মাণাধীন মন্দিরের দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয় পরেশ চৌহানকে। ওখানে যে মন্দির নির্মাণ হচ্ছে সেটি ব্যক্তি মালিকানাধীন মন্দির।
এলাকার কোনো মানুষ এই মন্দিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।’ তুলি জানান- ‘গত ১৩ই এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় তার ছোটো বোন বাথরুমে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়। এ সময় সেবায়েত দাবিদার পরেশ চৌহান ও তার সহযোগী কালাকোনা গ্রামের দীপঙ্কর দেব তপন তার বোনকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় চিৎকার দিলে পরিবার ও গ্রামের লোকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন।’ তুলি জানান- ‘ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে পরেশ চৌহান। জমি সংক্রান্ত কোনো বিরোধে সে গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত কোনো বিরোধও নেই। বরং অতীতেও একাধিকবার আমাদের ইজ্জত লুণ্ঠনের চেষ্টার ঘটনায় এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হলে সেখান থেকে রক্ষা পেতে চতুর ও ধুরন্ধর পরেশ ও তপন আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করেছিল।
আমরা তাদের লাম্পট্যের বিরোধিতা করলেই তারা নানাভাবে আমাদের হেনস্তা করতে তৎপর হয়ে ওঠে।’ তুলি জানান- ‘প্রায় এক দেড় বছর আগে তার কু-নজর পড়েছিল আমার ওপর। আমাকে সে নানাভাবে উত্যক্ত করে। এতে আমার জীবনও বিষিয়ে তুলেছিল। পরেশ চৌহানের এ আচরণের প্রতিবাদে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন। এ ক্ষোভ থেকে রক্ষা পেতে চতুর পরেশ চৌহান চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ তুলে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সাম্প্রতিক সময়ে পরেশ চৌহান ও তপন দেবের চোখ পড়ে আমার স্কুল পড়ুয়া বোন পুষ্প’র উপর। গত কয়েক মাস ধরে পরেশ চৌহান ও তার সহযোগী তপন দেব আমার বোনের জীবনকেও বিষয়ে তুললেও সে আমাদের কিছুই জানায়নি। এখন আমাদের দাবি হচ্ছে- পরেশ চৌহানকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। আর গ্রেপ্তার করা হোক পলাতক দীপঙ্কর দেব তপনকে।’